ভাটি অঞ্চলে ছয় মাস পানি আর বাকি ছয় মাস শুকনো মৌসুম। সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এই সাতটি জেলা জুড়ে ভাটি অঞ্চল বিস্তৃত। পুরো অঞ্চলে সুতোর মতো জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য হাওর-খাল-বিল-নদী-নালা। প্রকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্যে এ অঞ্চলকে সাজিয়ে রেখেছে। প্রকৃতির মতোই উদার ও প্রাণবন্ত এখানকার বাসিন্দারাও। ভৌগলিক বৈচিত্র্যের কারণেই বোধহয় হাওরবেষ্টিত জনপদের জীবনাচরণ ও সংস্কৃতি অত্যন্ত বিচিত্র, বর্ণিল, সমৃদ্ধ ও প্রাণবান।
হাওর জনপদের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনও বিচিত্র। এ অঞ্চলের প্রায় আশি ভাগ মানুষের পেশা কৃষিকাজ কিংবা মৎস্যশিকার। সঙ্গত কারণেই দিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম এদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তারা কখনো কৃষিকাজ, কখনো শ্রমিক আবার ফাকে ফাকে হাওরে নদীতে মাছ ধরে জেলের কাজ করেন। কার্তিক মাস থেকে শুরু হয় কৃষিকাজ। বীজতলা তৈরি করেন। তারপর চারা রোপন করে বৈশাখে ফসল গোলায় তোলেন। শুকনায় হাওরের জনগোষ্ঠী একাধারে শ্রমিকের কাজ করেন।
জৈষ্ঠ, আষাঢ়ে শুরু হয় আরেক জীবন। কাজ না থাকায় তখন অনেকেই নদীতে মাছ ধরেন। কেউ বা গ্রাম ছেড়ে চলে যান চট্রগ্রাম, ঢাকা, সিলেট শহরে। কিশোরগন্জের হাওর উপজেলা নিকলী, মিটামইন, অষ্টগ্রাম, ইটনায় হাজার হাজার ক্ষুদ্র কৃষক বর্ষায় জেলে হয়ে যান, আবার শুকনায় হয়ে পড়েন পুরোদস্তুর কৃষক। জীবনযুদ্ধে অবিরত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন হাওরের জনগোষ্ঠী। কখনো আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার ভয়। কখনো নদীভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারানোর ভয়।
এ ব্যাপারে নিকলী উপজেলার কারপাশা গ্রামের কৃষক সুরুজ আলী বলেন, আমাদের জীবনে বিশ্রাম বলতে কিছুই নেই। কখনো কৃষিকাজ, কখনো মাছধরা। দেশে কাজ না থাকলে শহরে গিয়ে কাজ করি।
ছবি : সংগৃহীত