যে কথা হয়নি বলা

মাস্টার্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি হলাম। পরিচিত বন্ধু বলতে একজনই সুমন। সুমনের আবার অন্য সাবজেক্ট। সুমনের রুমমেট, নাম অরণ্য। অরণ্যর সাথে মেয়েদের গায়ে পড়া স্বভাব একদিন চোখে পড়লো আমার। যেখানে অরণ্য সেখানেই মেয়েদের ছোটখাটো জটলা। অরণ্য ভালো ফুটবল খেলে, সেই সুবাদেই কলেজের মাঠে ওর খেলা দেখতে যেতাম। একদিন খেলার মাঠে আঘাত পেল, সোজা হাসপাতালে, ডান পায়ে বেন্ডেজ, ডাক্তার দুই মাসের বেড রেস্ট দিলো। অরণ্য চলে গেল দেশের বাড়ীতে। অরন্য না থাকায় বেশী করে অরন্যকে মিস করছি। সুমনের কাছ থেকে অরণ্যর নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম। কুশল বিনিময় করে জানতে চাইলাম, কবে ফিরছো? কলেজের মাঠের ঘাসগুলো তোমার. জন্য অপেক্ষা করছে! অরণ্য দুষ্টামি করে বললো, আর কেউ! তারপর থেকে অরণ্যর সাথে আমার বন্ধুত্ব। কলেজে না গেলে অরণ্য মেসেজ দিত, কলেজের ঘাসগুলো তোমার প্রতীক্ষায় আছে! আমিও মজা করে রিপ্লাই দিতাম আর কেউ?
আমার জন্মদিনে অরণ্য আমাকে সারপ্রাইজ দিলো। আমার সব বন্ধু বান্ধব নিয়ে, ছোটখাটো এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো। ওর আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ হলাম। অরণ্য সবসময়ই আমাকে চমক দেয়। আমি কখনো অরণ্য কে চমক দিতে পারিনি। দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলো। সবাই যার যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার সামনের রুমে অরণ্যর সিট পড়লো। পরীক্ষা শেষে প্রতিদিন কথা হতো, সময়গুলো যেন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা শেষে অরণ্য বাসায় আসলো একদিন। জানতে চাইলো চাকরি _বাকরি করবো কিনা, কোথায় থাকবো ইত্যাদি। একসময় দেখি অরণ্যর চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে, কথা বলতে গিয়ে কথা গুলিয়ে ফেলছে। আমি ভাবলাম যে কথাটি অরণ্য কখনো বলেনি বা আমি বলতে পারিনি, সেটাই বোধহয় বলবে। কিন্তু না যাওয়ার সময় শুধু বললো, যেখানেই থাকো ভালো থেকো। রেসাল্টের পর আমি একটা গবেষণা সংস্থায় জয়েন করি। অরণ্য একটা বেসরকারী ফার্মে। ফোনে কথা হয় কিন্তু দেখা করার সুযোগ মেলে না। অফিস থেকে বের হয়ে যখন যানজটে পড়ি, তখন মনে হয় কেন অরণ্যর সাথে দেখা হয় না। কেন পাশাপাশি গাড়িতে যানজটে পড়ে দুজনের গল্প জমে না!
একদিন অরণ্যর মেসেজ, সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছি আমি। বুকের ভেতরটা কেপে উঠলো। অরন্যকে ফোন দিলাম, সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছ মানে কি.?আমার একটা বাইরের অফার এসেছে, এ মাসের মধ্যেই চলে যাব। অরণ্যর জন্য তিনটা গিফট কিনলাম। অরণ্য কে কখনো আমি সারপ্রাইজ দিতে পারিনি, তাই না বলেই ওর বাসায় হাজির। দরজা খুলে অরণ্য হাসছে, যাক আসলে তাহলে, তোমার হাতে এগুলো কি? আমি প্যাকেট গুলো খুললাম, প্রথম টাতে ঘড়ি, তুমি সময় দেখতে যখনই চোখ বুলাবে ঘড়িটাতে তখনই আমার কথা মনে পড়বে তোমার। দ্বিতীয়টা হলো ব্রেসলেট, যখনই পড়বে তখনই আমার কথা মনে হবে। আর এটা হলো বেল্ট, তুমি যখনই এটা পড়বে মনে করবে আমি তোমাকে জড়িয়ে আছি! অরণ্যর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি, চোখে জল টলটল করছে! এ জল কষ্টের নয় আনন্দের। অরণ্য বেল্ট টা পড়ছে আর বলছে, কেন এতদিন আমাকে বলোনি তুমি এতো ভালোবাসো আমায়?

শাইলা পারভীন সুমা
Shailashoma@gmail.com

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!