সুনামগঞ্জের বৌলাই নদীতে দেড় কিলোমিটার নৌজট!

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

সুনামগঞ্জে বালু-পাথর পরিবহনের কারণে জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও ধর্মপাশা ঘেঁষে প্রবাহিত বৌলাই নদীতে দেড় কিলোমিটারব্যাপী নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চলছে এ অবস্থা। এতে নদী তীরবর্তী মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে।

এর আগে জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলীর ইউনিয়নের বৌলাই নদীতে সৃষ্ট নৌজট বেশ কয়েক দিনের চেষ্টায় মুক্ত হয়েছে। কিন্তু গত রোববার থেকে নদীর ভাটিতে আবার তীব্র নৌজট শুরু হয়েছে। এতে পাঁচ শতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌযান (ভলগেট) আটকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ বালু-পাথর শ্রমিক সংগঠনের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী তালুকদার। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ জট লেগে আছে বলে জানান তিনি।

এ দিকে বৌলাই নদীতে নৌজটের কারণে নৌযানের মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছেন নদী তীরের গ্রামগুলোর মানুষেরা। নদীর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আশপাশের গ্রামের কৃষকসহ এলাকাবাসী।

নৌযানের অনেক শ্রমিক জানান, নৌপথে তাহিরপুরের ফাজিলপুর থেকে বালু-পাথর সংগ্রহ করে সারাদেশে পরিবহনের জন্য সুনামগঞ্জের সুরমা, রক্তি, বৌলাই নদীসহ বেশ কয়েকটি নদী পাড়ি দিতে হয়। বৌলাই নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় প্রতি বছরই নদীর বিভিন্ন স্থানে নৌজটের সৃষ্টি হয়। এতে তিন-চার দিনের নদীপথ অতিক্রম করতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ এক স্থানেই বসে থাকতে হয়। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি, নৌযানের মালিক-শ্রমিকেরাও চরম লোকসানের শিকার হচ্ছেন দিন দিন। প্রতি বছরই ভরাটকৃত নদী খননের দাবি জানালেও উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে খননকাজ হচ্ছে না।

এলাকাবাসী জানান, নদীর তলদেশ ভরাট ও নৌযান শ্রমিকদের প্রতিযোগিতায় বারবার নৌজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নৌ পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন অনেক চেষ্টা করলেও বেপরোয়া নৌযান শ্রমিকদের বিশৃঙ্খলায় সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নদীতে শৃঙ্খলা বজায় থাকলে এত নৌজট হতো না।

একাধিক নৌযানের সুকানি জানান, নদীতে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তাতে নৌযান চলাচলের সুযোগ থাকলেও আরো খননের প্রয়োজন।

জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের শাহানুর মিয়া বলেন, আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা বেশ কয়েক দিন ধরে আটকা পড়েছে। নদীতে আরো কয়েক শ’ নৌকা আটকে আছে। নদীতে পানি কম। ভরাট হয়ে গেছে। এ জন্য নৌযান চলছে না।

কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, বৌলাই নদীর বেশির ভাগ জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। প্রতি বছরই এই মওসুমে মাহমুদপুর, পৈণ্ডুপ, হিজলা গ্রামের সামনে হাঁটু থেকে কোমর পানি হয়ে যায়। এ জন্যই কয়েকটি গ্রামের সামনে নৌজটের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই এ সমস্যা দেখা দিছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে নৌজট বেশি হচ্ছে। নদী ভরাটে শুধু নৌজটই হয়, এমন না। চৈত্র-বৈশাখ মাসে ফসল কাটার সময় পাহাড়ি ঢলের পানি নদীর তীর উপচে হাওরে প্রবেশ করে। এ সময় ফসল রক্ষা বাঁধ অনেক ঝুঁকিতে থাকে।

বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বেহেলীর বৌলাই নদীতে নৌজটে শ্রমিকদের পাশাপাশি এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন। নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতেও সমস্যা হচ্ছে। নৌশ্রমিকদের মল-মূত্রে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। নৌজটে নদী পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য নৌকা চলাচলও বন্ধ রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করে নৌজটমুক্ত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ববস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, রক্তি নদী থেকে বৌলাই নদীর কালীবাড়ি পর্যন্ত ভরাটকৃত প্রায় ২৭ কিলোমিটার জায়গা খননের জন্য প্রকল্প তালিকা তৈরি করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই নদী খননের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।

সূত্র : নয়া দিগন্ত, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

Similar Posts

error: Content is protected !!