শীতে চর্মরোগ

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, শীত এলে বেশ কিছু চর্মরোগ দেখা যায়, যা গরমকালে তেমন একটা দেখা যায় না। আরেকটি ব্যাপার আমরা প্রায়ই লক্ষ করে থাকি, রোগীরা এসে বলেন- শীত এলে তার শরীর খুব চুলকায়। যদি একান্তই অসহ্য হয়ে পড়ে, তবে সে ক্ষেত্রে হালকাভাবে হাতের তালু দিয়ে ত্বক চুলকানো যেতে পারে। লিখেছেন- ডা: দিদারুল আহসান
শুষ্কতার কারণেই এ রকম চুলকানি দেখা দেয়, তাহলে ভালো কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকে। ময়েশ্চারাইজার পাওয়া না গেলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেও ত্বক ভালো থাকে। চুলকানির পরিমাণ মারাত্মক হলে গ্লিসারিনের সাথে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
এরপর একটি রোগের কথায় আসা যাক, যা শীত এলেই বাড়ে। সেটির নাম হচ্ছে ইকথায়োসিস। এ রোগটি একটি জন্মগত রোগ এবং এ রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ করা যায় এবং দেখা গেছে, প্রতি হাজারে একজন এ রোগে ভুগে থাকেন। নারী-পুরুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও সমপরিমাণ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হন, তাদের হাত ও পায়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়ি গুঁড়ি আঁশ পায়ের সামনের অংশ ও হাতের চামড়ায় দেখা যাবে। তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা বলবেন, রোগটি তার দেহে ছোটবেলা থেকেই আছে এবং প্রতি বছর শীত এলেই এটি বেড়ে যায়। এদের হাত ও পায়ের তালুর দিকে তাকালে দেখা যাবে, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট, যা কি না সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। তাদের অ্যালার্জির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা বলবে, তাদের নাক দিয়ে প্রায়ই পানি পড়তে থাকে; অর্থাৎ তাদের সর্দি অবস্থা থাকে। তাদের মা-বাবার ব্যাপারে খবর নিলে আরো পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে, তাদেরও কোনো না কোনো ধরনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ছিল বা এখনো আছে। এ রোগটি কখনোই একেবারে ভালো হয় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যদি ত্বকে তৈলাক্ত পদার্থ নিয়মিত মাখা যায়। সে ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড খুবই কার্যকর। এটি পাওয়া না গেলে গ্লিসারিনের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলেও খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে গ্লিসারিন ব্যবহারের সমস্যা হচ্ছে, ত্বক আঠা আঠা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে একটি টাওয়েল দিয়ে অতিরিক্ত গ্লিসারিনটুকু চেপে তুলে নিলে ত্বকের আঠালো বা চটচটে ভাব কেটে যায় এবং ত্বক খুবই ভালো রাখা সম্ভব। অ্যাকজিমার নাম আমরা সবাই জানি। সেই অ্যাকজিমাও কিন্তু শীত এলে বাড়তে পারে। তাই অ্যাকজিমায় আক্রান্ত রোগীদের আমরা সব সময়ই বলে দিই, ভালো হওয়ার পরও যেন সে স্থানটি শুষ্ক হতে দেয়া না হয়। একটি বিশেষ ধরনের অ্যাকজিমা আছে, যার নাম হচ্ছে- অ্যাকজিমা ক্রাকুয়েলেটাম। এটি সাধারণত ৪০ বছরের ঊর্ধ্বের লোকদের হয়। এটি শীত এলেই বাড়ে। কারণ শীতে বাতাসের জলীয় পদার্থ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ ও হালকা আঁশ লক্ষ করা যায়। কখনো কখনো ত্বক পুরো হয়ে পড়তেও দেখা যায়। একটি কথা মনে রাখা খুবই প্রয়োজন, চুলকালে ত্বক পুরো হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তা শক্ত ও অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে থাকে।
আরেকটি রোগ আছে, যার নাম আমরা প্রায় সবাই জানি, রোগটি হচ্ছে স্কেবিস। বাংলায় খুজলি-পাঁচড়াও বলে থাকেন অনেকেই। এটির সাথে যদিও সরাসরি শীতের বা বাতাসের আর্দ্রতার কোনো সম্পর্কের কথা জানা যায় না, তবুও দেখা গেছে এ রোগটি শীত এলেই ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুরা এতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হতে থাকে। হতে পারে শীতকালে যেহেতু এক বিছানায় একত্রে অনেকেই চাপাচাপি করে ঘুমায়, সে কারণে রোগটি এ সময় ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। এ রোগটি আমাদের দেশের গরিব শ্রেণীর মধ্যে বেশি হতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব শিশু স্কুলে যায় তারাই এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি একটি জীবাণুবাহিত রোগ। যে কীটটি দিয়ে এ রোগটি হয় তার নাম হচ্ছে স্কেবিয়াইসারকপটিস স্কেরিবাই। এ ক্ষেত্রে শরীরে অসম্ভব চুলকানি হতে দেখা যায় এবং রাতের বেলা চুলকানির তীব্রতা আরো বাড়ে।
রোগটি খুবই সাধারণ হলেও রোগটির চিকিৎসায় দেরি হলে এমন সব অবস্থা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে যে, ভালো অভিজ্ঞতা না থাকলে অনেকেই ভুল চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ঘরের একাধিক ব্যক্তি এ রোগে ভুগে থাকেন। ফলে ঘরের সবাইকে এ রোগের চিকিৎসা একসাথে করাতে হয়, নয়তো ভালো হয়ে এ রোগ আবার তার দেহে দেখা দেবেই।
এ ছাড়াও কিছু কিছু রোগ আছে, যেমন- হাম ও চিকেনপক্স। এগুলোর সাথে আমরা খুবই পরিচিত। এগুলো ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। লক্ষ করলে দেখবেন, এগুলোও শীতকালেই বেশি হয়ে থাকে।

লেখক : চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : আলরাজী হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা। ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮

সূত্র : নয়া দিগন্ত, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!