মহিবুর রহিমের একগুচ্ছ কবিতা

মহিবুর রহিমের একগুচ্ছ কবিতা

 

একচক্ষু মিডিয়ার মতো এই চোখের অপারগতা

প্রতিনিয়ত উদ্বেগের করোনা বাতাস বয়ে যায়
ছিন্নভিন্ন খর রৌদ্রের আয়নায় দেখি নিজেরই মুখ
নেকড়েদের খুবলে নেয়া খাদ্যের মতো
নাকি পলিথিন উড়ানো রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরের মতো
নাকি সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলোর মতো
নাকি গ্রিসের জঙ্গলে অনাশ্রিত অভিবাসীদের মতো
কিছুতেই আর বুঝতে পারি না
যেন একচক্ষু মিডিয়ার মতো চোখের অপারগতা
গাজা উপত্যকায় দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন আর্তনাদ বুঝতে পারি না
যুদ্ধবাদের কুফলে চাপা পড়া পৃথিবীর উৎকণ্ঠা বুঝতে পারি না
কাশ্মিরের বোবা কান্না বাতাসকে ভারী করে আমাকে করে না!
যেখানে সযত্নে প্রতিপালিত হয় মানুষের প্রতি ঘৃণা
এমন রাজনীতির উর্বর শস্যক্ষেত্রে আজ আর আমাদের কারোরই অমত না!
বারুদের ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে সর্বসম্মত আমাদের নাগরিক চেতনা
একমাত্র ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমকেই বলা হচ্ছে এই ভূগোলের পরম প্রতিরক্ষা
দুর্বৃত্তপনার নাম সভ্যতার কূটনীতি
গোলার্ধের বুকে কম্পন বাতাসের বুকে ভয়
সমুদ্রের সহ্যসীমা অতিক্রম করে উন্নয়ন দুর্বৃত্তপনা
উদ্বেগের পিপিই পড়া শহরগুলোতে
ছিন্নভিন্ন ঝরে পড়ে ক্ষুধার্ত রৌদ্রের ফেনা
হয়তো তা করোনা হয়তো তা আমাদেরই অর্জিত কোন পাপের দেনা।

 

মানুষ নিজেই একটি কবিতা  (প্রয়াত বন্ধু মিজানুর রহমানকে উৎসর্গ)

কোন মহৎ কবিতাই এতটা হৃদয়ভেদী নয়
যতটা একজন মানুষ তার অস্তিত্বে জানান দিতে পারে
আমি কোন উপমা বা কোন উৎপ্রেক্ষার কাছে মানুষের নান্দনিকতা খুঁজে পাই না
আমি চিত্রকল্পের পাতা তন্নতন্ন করে দেখেছি
মানুষের গন্ধ আকর্ষণ বা আবেদনের মতো কোন সারমর্ম পাই নি
কতদিন পুরাণের ঐতিহ্যে আদি অকৃত্রিমতায় ঘুরেছি
হেঁটেছি বিধ্বস্ত সভ্যতার পথে ইন্দ্রজাল বিছানো কত কাহিনির পংক্তিতে
মানুষের মতো বিকল্প মানুষ আমি দেখিনি কোথাও
যেমন মিজানের মতো কোন বিকল্প মিজান
ইকবালের মতো কোন বিকল্প ইকবাল পৃথিবীর কোন সার্থকতায় নেই
তোমরা যারা ক্ষুধা ও প্রেমের জন্যে এতটা উৎগ্রিব ছিলে
কিংবা কোন অলীক স্বপ্ন বপনের তাগাদায় নিজেকে একটা ক্লান্ত চিলের মতো আকাঙ্ক্ষার রোদে ঢেকে দিলে
আজ শোনো, সময় যে ঔদার্য তোমাকে দিয়েছিলো তার প্রতিপাদ্য ছিল একমাত্র মানুষ
সেই সংবেদন অহমের আঁচিলে ঢেকে চলে গেল দিন
তবু তার গন্ধ আজও উপেক্ষার স্মৃতিতে উড্ডীন।

 

ফসল তোলার মওসুম

তোমার ডান হাতের জন্যে শুভ সংবাদ
এসেছে তার ফসল তোলার মওসুম
বাম হাতের পণ্য দাহ হবে
আর ভার মুক্ত হবে জরাগ্রস্ত তোমার সময়
ইমানের মাটিতে পুঁতে দাও তোমার সংযম
ধৈর্যের উপত্যকায় আবাদ করো সবুজ ঐশ্বর্য
শৃঙ্খলিত অমঙ্গল তোমার সাফল্যে হবে হতাশ
তোমার ভাণ্ডার ভরে উঠবে পুণ্যের সওদা
ঝরে যাক তোমাকে ঘিরে কর্পোরেট গ্লানির সফেন
ধৌত করে নাও তোমার মলিন সত্ত্বাকে
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক তাকওয়ার সুবাস।

 

ইফতার

ক্ষুধা তৃষ্ণা লোভ নিস্তব্ধ হয়ে থাকে
তোমার অথৈ সংযমের সামনে
বেহেস্তের উদ্যানে তখন অপার বিস্ময়
ও হার না মানা মনুষ্যত্ব
ক্লেদাক্ত দুনিয়ার নির্জন মাঠের ফুল
এ তোমার নিজস্ব গৌরব
কোথাও পাহাড় টলে তবু তোমাকে টলাতে পারে না
কোথাও পাথর গলে তবু তোমাকে গলাতে পারে না
তোমাকে ঘিরে থাকে আল্লাহর সন্তোষ
যেন ইস্পাতের মতো সুদৃঢ় রোজাদার
যখন ক্ষুধা কাতর দিনান্তে সামনে থাকে ইফতার।

Similar Posts

error: Content is protected !!