আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
করোনা ভাইরাসের হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য সুখবর। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার করোনা পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। গত তিন দিনে ১৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র তিন জনের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।
তবে এই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে খানিকটা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ল্যাবে জেলার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া ব্যক্তিদের নমুনা পাঠানো হয়। এ সময় ল্যাবে পাঠানো নমুনার ৮০ থেকে ৯০ ভাগেরই রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে।
এ পরিস্থিতিতে গত ২১ এপ্রিল ল্যাব পরিবর্তন করে ঢাকার আইপিএইচ ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর প্রথম দিন থেকেই কমতে থাকে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। আগের ল্যাবে প্রথম ১৩ দিনে ১৭৪ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হলেও ল্যাব পরিবর্তন করার পরবর্তী ১৫ দিনে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় মাত্র ১৬ জন। ফলে নমুনা পরীক্ষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়।
তবে এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ সবার সহযোগিতায় জেলায় কমিউনিটি পর্যায়ে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে বলেই আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে।
গত ৫ মে পর্যন্ত জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ১৯০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪২ জন। তাদের মধ্যে প্রায় ১২৫ জনই ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্য। জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বর্তমানে জেলায় ৪৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তবে তারাও অনেকটা সুস্থ। তাদের মধ্যে ৫ জন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাকিরা বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে কেউ নেই। জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে আইসোলেশনে থাকা ৪৫ জনের মধ্যে অনেকেরই দ্বিতীয়বারের নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জেলা করোনা কমিটি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৮ জন আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। একইভাবে হোসেনপুর উপজেলায় ৩ জন আক্রান্তের মধ্যে একজন সুস্থ, করিমগঞ্জে ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জন সুস্থ, তাড়াইলে ২৮ জনের মধ্যে ২২ জন সুস্থ, পাকুন্দিয়ায় ৪ জনের মধ্যে ২ জন, কটিয়াদীতে ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন, কুলিয়ারচরে ১০ জনের মধ্যে ৫ জন, ভৈরবে ৪৭ জনের মধ্যে ৩৮ জন, নিকলীতে ৫ জনের সবাই, ইটনায় ১১ জনের সবাই, মিঠামইনে ২৪ জনের মধ্যে ১৮ জন এবং অষ্টগ্রামে ২ জন আক্রান্তের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। সেখানে নমুনা পরীক্ষার জন্য দুটি বুথ বসানো হয়েছে। পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রমও চলছে।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, প্রথম দিকে ডাক্তাররা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়া আউটডোরে চিকিৎসা দেয়ায় তারা দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়াসহ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফলে দ্রুত আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সূত্র : জাগোনিউজ২৪