প্রাথমিকের অনলাইন ক্লাসে দেশসেরা ধামইরহাটের শিক্ষক মাহমুদা

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি ।।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার প্রাথমিকের অনলাইন ক্লাসে দেশসেরা হয়েছেন। পেয়েছেন একাধিক সম্মাননা, সনদ ও ক্রেস্ট। উজ্জ্বল করেছেন ধামইরহাট উপজেলার মুখ, গর্বিত উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। দেশসেরা এই মেধাবী শিক্ষক ধামইরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত বছরের ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের সমস্ত বিদ্যালয় করোনাভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ালেখা সংক্রান্ত সরাসরি যোগাযোগের সমস্ত উপায় বন্ধ হয়ে যায়। সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার নিজ উদ্যোগে ওই বছরের এপ্রিল মাস থেকে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজ টাইমলাইনের সহযোগিতায় ক্লাস নিতে শুরু করেন। ক্রমাগত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলার দৃষ্টিতে আসেন শিক্ষক মাহমুদা আক্তার। এরপর মে মাস থেকে নওগাঁ জেলাসহ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন স্কুলের শিক্ষক হয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করেন।

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে এটুআই কর্তৃক পরিচালিত “ঘরে বসে শিখি পেইজ” বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেইজ, রাজশাহী ডিভিশনাল অনলাইন স্কুল, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, দিনাজপুর, নীলফামারী, খাগড়াছড়ি অনলাইন স্কুলসহ বিভিন্ন জেলার স্কুলে ক্লাস নেওয়া শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন এটুআই কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষক বাতায়নে সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তারের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বরে নওগাঁ জেলার একমাত্র নারী ICT4E district ambassador হিসেবে নিয়োগ করেন। পুরো দেশে মোট ২৪ হাজার ৭ জন অ্যাম্বাসেডর রয়েছেন এবং শিক্ষক বাতায়নে মোট সদস্য রয়েছেন ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৮ জন।

অনলাইন ক্লাসের সুনাম এবং প্রাপ্তিস্বরূপ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক মাহমুদা আক্তারকে সম্মাননা সার্টিফিকেট, সংবর্ধনা এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সর্বশেষ “শিক্ষক বাতায়ন” কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তারকে পুরো বাংলাদেশের সেরা অনলাইন পারফর্মার হিসেবে মনোনীত করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে পুরো দেশে একমাত্র অনলাইন পারফর্মার মাহমুদা আক্তার সকলের নজরে আসেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের মিটিংয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি নিয়মিত Google meet (গুগল মিট, অনলাইনে) এ শিশুদের পাঠদান করে থাকেন। চলতি বছরে ২ মে থেকে সরকার অন্তবর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা দেন। সেই পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ধামইরহাটের প্রত্যন্ত এলাকায় শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিয়মিত সরকারের নির্দেশনাতে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ (হোমওয়ার্ক) দিয়ে আসতেন এবং শিশুদের পড়া বুঝিয়ে দিতেন। এছাড়া করোনা মহামারিতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ফোনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়িতে গিয়ে, ফেসবুক লাইভে, অলনাইনে ক্লাস নিয়েছেন, প্রতিটি শিশুকে আলাদা আলাদা শিক্ষা প্রদান করে তাদের শিখন ঘাটতি দূর করার চেষ্টা করেছেন।

দেশসেরা সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার জানান, ২০০৩ সাল থেকে আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছি। ১৮ বছর চাকরি জীবনে আমি দু’বার ধামইরহাট উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম। বর্তমানে দেশের অন্যতম হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার এ অর্জন উৎস্বর্গ করছি প্রাথমিকের পুরো শিক্ষক সমাজকে।

ধামইরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক আবু ইউসুফ মো. বদিউজ্জামান বকুল বলেন, আমাদের সহকর্মী শুধু ধামইরহাট নয়, পুরো দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার গনপতি রায় বলেন, মাহমুদা আক্তার শুধু ধামইরহাট নয়, পুরো দেশে শিক্ষকতা করেছেন। যার ফলে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ও সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকেও তাকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।

Similar Posts

error: Content is protected !!