ভোলায় ধর্মীয় উসকানির মামলায় ইটনার যুবকের কারাদণ্ড

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে এক যুবকের আইডি হ্যাক করে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করার অপরাধে বাপন দাস (২৫) নামে অপর এক যুবককে আট বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম ফারুক এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর বাপন দাস মহানবী হজরত মহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিপ্লব চন্দ্র শুভর আইডি থেকে ফেসবুকে আপত্তিকর লেখা পোস্ট করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে মুসলমানরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হন। আহত হন দেড় শতাধিক।

ঘটনার মূল হোতা বাপন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রোববার বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় বাপন দাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে পুলিশের পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. ইসতাক আহমেদ রুবেল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত বাপন দাসকে ৩৪ ধারায় আট বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া ২৮/১ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৩১/১ ধারায় চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট মো. ইসতাক আরও বলেন, রায়ে একসঙ্গে সব দণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেওয়ায় বাপন দাসকে আট বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

দণ্ডপ্রাপ্ত বাপন দাস কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চাচুয়া গ্রামের বিকাশ দাসের ছেলে। তিনি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ্র শুভর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অর্থ আদায় করতে চেয়েছিলেন। এতে ব্যর্থ হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই পোস্ট দিয়েছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর বিপ্লব চন্দ্র শুভর আইডি থেকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর লেখা পোস্ট করা হয়। ওইদিনই বিপ্লব তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার তথ্য জানিয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হন। পুলিশ বিপ্লব চন্দ্র, মো. ইমন ও মো. রাফসানকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ২০ অক্টোবর ভোলার বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে উপস্থিত হতে সকাল থেকে তারা মাইকিং করেন। পরে সমাবেশের জন্য পুলিশ অনুমতি না দিলেও সকাল ৯টা থেকে লোকজন মাঠে জড়ো হতে থাকেন। মিছিল করতে না পেরে সেখানেই অবস্থান শুরু করেন আয়োজকরা। পরে পুলিশ ‘বাটামারা পীর সাহেব’ মাওলানা মহিবুল্লাহকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং তাকে ঈদগাহ জামে মসজিদের দোতলায় নিয়ে যান। ওই সময় গুঞ্জন ওঠে, মাওলানা মহিবুল্লাহকে পুলিশ আটক করেছে। এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে চারজন নিহত হন। আহত হন দেড় শতাধিক।

এদিকে, তদন্তে গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এরপর ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি পুলিশ এ ঘটনার মূলহোতা হ্যাকার বাপন দাসকে গ্রেফতার করে। বাপন তার দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে পুলিশ বিপ্লবসহ গ্রেফতার তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে বাপন দাসের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রোববার (২৪ এপ্রিল ২০২২) ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় বোরহানউদ্দিন থানার আরও দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন।

 

সূত্র : জাগোনিউজ২৪

Similar Posts

error: Content is protected !!