খনন না হওয়ায় নাব্য সংকটে কিশোরগঞ্জের নদীগুলো

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কিশোরগঞ্জ অফিস।।

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকাসহ ১৩টি উপজেলাতেই জালের মতো ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় নদনদী। তবে জেলার অনেক নদীই পলি পড়ায় এখন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে কোনোমতে টিকে আছে। নাব্য হারিয়ে বেশিরভাগ নদী শুষ্ক মৌসুমে নৌপথের অযোগ্য হয়ে পড়ে। শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো মৌসুমে বেশিরভাগ নদী ফসল উৎপাদনে তেমন কোনো কাজে আসছে না।

কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র, ঘোড়াউত্রা, ধনু ও মেঘনার মতো বড় বড় নদনদী বয়ে গেছে। আবার ধলেশ্বরী, কালনী, নরসুন্দা, ধেনু, সিঙ্গুয়া, সোয়াইজনী নদীর মতো আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নদী জেলাকে উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ জামালপুর দিয়ে ঢুকে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর গাঁ বেয়ে ভৈরবের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বর্ষাকালে ব্যাপ্তিময় ব্রহ্মপুত্রের তাণ্ডবে এর তীরবর্তী অনেক গ্রামে ভাঙনের প্রলয় চলতে থাকে। বহু গ্রামসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং কৃষিজমি এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্র গ্রাস করে নিয়েছে। অনেক জনবসতি বিলীন হয়ে গেছে, উদ্বাস্তু হয়েছে বহু পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে দেখা যায় ঠিক উল্টো চিত্র। বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্রের প্রস্থ মাইলখানেক, শুষ্ক মৌসুমে রূপ ধারণ করে একটি সরু নালায়।
soaijoni-nadee
একসময় কিশোরগঞ্জের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌপথ। নৌ যোগাযোগের অনেক এলাকায় এখন সড়কপথে চলে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। এ ছাড়া এখন নৌকায় বসানো হয়েছে মোটরযুক্ত পাখা। নৌকার নাম হয়েছে ট্রলার। ১০ ঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়া যায় এক ঘণ্টায়। এ কারণেও সাধারণ নৌকার সংখ্যা কমে গেছে। তবে নাব্য সংকটের কারণে এসব ট্রলার সব নৌপথে সারাবছর চলাচল করতে পারে না ।

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এখন সব বছর ভরা বর্ষা হয় না। কোনো কোনো বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যা মানুষকে ভোগায়, আমন আবাদ ব্যাহত হয়। আবার কোনো কোনো বছর বর্ষার পানির স্থায়িত্ব স্বল্পকালীন হয়। তখন কৃষকরা ভূগর্ভস্থ পানি ছাড়া আমন চাষাবাদ করতে পারেন না। এদিকে, অধিকাংশ নদীতে পলি পড়ে ভরাট হতে হতে তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব নদী নৌপথ হিসেবে সচল থাকে না। পরিণত হয় মরা নদীতে। কোনো কোনো নদীর তলদেশ একেবারে শুকিয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জের নদীগুলো কখনোই খনন বা ড্রেজিং হয়নি। পলি জমতে জমতে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। আগাম বন্যায় পানি নদীর পাড় উপচে আশপাশের হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে দেয়। এতে কোটি কোটি টাকার ধান বিনষ্ট হয়।

হাওরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই নৌপথ একসময় গুরুত্বপূর্ণ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। কয়েক বছর ধরে এসব নৌপথ কেবল বর্ষাকালে সচল থাকে। জেলার প্রতিটি নদীরই ড্রেজিং জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সভাপতি অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী বলেন, জেলার সব নদীর নাব্য ফিরিয়ে এনে আগাম বন্যার কবল থেকে প্রধান ফসল বোরো রক্ষা করা এবং

ভাঙন থেকে গ্রামগুলো রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা খুব দ্রুত গ্রহণ করা উচিত। কিশোরগঞ্জের

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় নদী খননের বেশ কিছু বড়

প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের অধীনে নদী খনন ও বাঁকা নদী কেটে (লুপ কাট) সোজা করা হবে। প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ পাওয়া গেলে ধারাবাহিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সূত্র : নাব্য হারিয়ে প্রাণহীন কিশোরগঞ্জের নদী (সমকাল, ২৬-০২-২০১৭)

Similar Posts

error: Content is protected !!