মেধা হোক ব্যক্তির অহংকার, মেধাবী হোক জাতির গর্ব

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

সারা জামান চৈতি। বাবা সাইয়েদুজ্জামান মানিক, পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। বর্তমানে নিকলী উপজেলার কারপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মা রাবেয়া জামান, একজন আদর্শ গৃহিণী। দুই ভাই, এক বোনের মাঝে সারা জামান চৈতি সবার ছোট। বড়ভাই বেনজীর আহমেদ রবিন, পেশায় অডিট অফিসার। ছোট ভাই তানভীর আহমেদ অচিন, দেশের বাইরে থেকে সবেমাত্র এমবিবিএস (ডাক্তারি) শেষ করেছেন। অল্প কয়েক দিনের মাঝেই দেশে ফিরবেন। বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করবেন। স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশে গ্রাম (নিকলী) থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে আসেন জেলা শহর কিশোরগঞ্জে।

বাবা, মা ও দুই ভাইয়ের সাথে চৈতি

চৈতিকে ভর্তি করা হল কিশোরগঞ্জ শহরস্থ তমালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি পাস করে ভর্তি হয় এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (জেলায় মেয়েদের জন্য একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়)। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হিসেবে ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কৃতিত্বের সাথে গোল্ডেন A+ (জিপিএ-৫) পেয়ে পাস করে সে। বোর্ডের মেধাতালিকা প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গেল সারা জামান চৈতি কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রথম এবং ঢাকা বোর্ডে ১২তম স্থান অধিকার করেছে।

এসএসসি পাস করে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয় গুরুদয়াল সরকারি কলেজে। ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে; সেখানেও চৈতি কৃতিত্বের সাথে কিশোরগঞ্জ জেলায় একমাত্র গোল্ডেন A+ (জিপিএ-৫) পেয়ে পাস করে।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। মানুষ মন থেকে চাইলে এবং সেই অনুযায়ী চেষ্টা করলে তার অসাধ্য কিছুই থাকে না। সে কথাটি আবারো প্রমাণ করে দিল সারা জামান চৈতি। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “Royal Faculty” নামে পরিচিত ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে। বিষয় পেয়েছে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স।

বুধবার ১২ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার বোর্ড ট্যালেন্টের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও চৈতি সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে একমাত্র বোর্ড ট্যালেন্ট হয়েছে। ঢাকা বোর্ডে তার মেধাক্রম ৫২তম।

কৃতি শিক্ষার্থীর সম্মাননা নিচ্ছে চৈতি

তার এই সাফল্যের পেছনে নিজের চেষ্টার পাশাপাশি যে মানুষটির অনুপ্রেরণা এবং চেষ্টা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে তিনি হলেন তার মা। পরীক্ষার আগে রাতগুলোতে সারা জামান চৈতি যখন রাত জেগে পড়ত তার মা রাতের পর রাত মেয়ের পাশে বসে থেকে সঙ্গ দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রতিটা সন্তানের ভাগ্যে যেন এমন একজন মা জোটেন এমন দোয়া চৈতির

নিকলী উপজেলাধীন কারপাশা ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের সারা জামান চৈতি সবার কাছে দোয়া চেয়েছে যেন তার জীবনের বাকি পথটুকু সফলতার সাথে অতিক্রম করতে পারে। তার মেধাকে যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারে। সেই সাথে নিজ এলাকা আমাদের নিকলী উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জ জেলার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।

সারা জামান চৈতির ধারাবাহিক এ সাফল্যে শুভ কামনা জানিয়েছে ঢাকাস্থ নিকলী সমিতি এবং নিকলী উপজেলাকেন্দ্রিক প্রথম অনলাইন সংবাদমাধ্যম আমাদের নিকলী ডটকম পরিবার।

ছবি সূত্র : বেনজীর আহমেদ রবিন

Similar Posts

error: Content is protected !!