রুটি মেকারের কারিগর

মিনিটে বানানো যায় ১২টি রুটি, এমন একটি ‘রুটি মেকার’ বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন মাগুরার শালিখার বুনাগাতি গ্রামের হুমায়ুন কবীর। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এটি যাচ্ছে বাইরেও।

রুটি মেকার তৈরির কাজে ব্যস্ত কর্মচারীরা

 

যেভাবে শুরু

২০১১ সালের কথা। স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় একদিন সকালে রুটি বানাতে গিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়লেন হুমায়ুন। রুটির আকার যেমন এবড়োখেবড়ো হলো, সময়ও লাগল অনেক বেশি। পরে বাজার থেকে সংগ্রহ করলেন রুটি মেকার। নির্দেশিকা পড়ে রুটি বানাতে সক্ষম হলেন বটে; কিন্তু খটকা থেকে গেল অন্যখানে। এটি একদিকে যেমন বিদ্যুৎনির্ভর, অন্যদিকে বেশ জটিল। এ ছাড়া এটিতে কেবল কাঁচা আটার রুটি হয়। সিদ্ধ আটার রুটি বা লুচি এতে বানানো সম্ভব নয়। শুরু করলেন গবেষণা। হুমায়ুন চাইছিলেন এমন একটি রুটি মেকার, যেটিতে সব ধরনের রুটি বানানো যাবে সহজে ও স্বল্প সময়ে। প্রথমে কয়েকজন কাঠমিস্ত্রির সহযোগিতা নিলেন। হুমায়ুনের দেখানো ডিজাইনে তাঁরা মোটামুটি একটি রুটি মেকার বানিয়ে দিলেন। রুটি হলো; কিন্তু পুরোপুরি গোলাকার হলো না। সময়ও লাগল বেশি। আবার গবেষণা। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে রুটি মেকারে সংযোজন করলেন পিচ্ছিল এক ধরনের পলি পেপার। যেটি দেখতে অনেকটা পলিথিনের মতো। এই পেপার সংযোজনের পর অবস্থা গেল পাল্টে। হুমায়ুন ঠিক যেভাবে চাইলেন, সেভাবেই তৈরি হলো রুটি। তিন বছরের গবেষণা সফল হলে হুমায়ুন কবীর এটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে উদ্যোগী হলেন। গ্রামের বাড়ি মাগুরার বুনাগাতিতে চালু করলেন রুটি মেকারের কারখানা। হুমায়ুনের কারখানায় এখন কাজ করছেন ১৭ জন কর্মচারী।

 

তৈরি হয় যেভাবে

হুমায়ুনের কারখানায় প্রতিদিন আট থেকে ১০টি রুটি মেকার তৈরি হচ্ছে। এ যন্ত্রের মূল উপকরণ কাঠ। প্রথমে কাঠ সাত ইঞ্চি পুরু রেখে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও আট ইঞ্চি প্রস্থের সাইজে কাটা হয়। তারপর কাঠের দুটি অংশ কবজা দিয়ে আটকানো হয়। পরে তাতে বসানো হয় হাতল। কাঠের কাজ শেষ হলে তাতে রং করে শুকানো হয়। সব শেষে মূল অংশের মাঝখানে পলি পেপার লাগালেই শেষ হয় রুটি মেকার বানানোর কাজ। কাঠের সাইজ ছোট-বড় করে বদলে দেওয়া হয় রুটি মেকারের আকার। ওপরে-নিচে বসানো কাঠ দুটি এই রুটি মেকারের মূল অংশ। এর মধ্যখানে আটার গোলা রেখে চাপ দিলেই রুটির আকার পায়।

 

দরদাম

আকারভেদে হুমায়ুনের রুটি মেকার বিক্রি হচ্ছে চারটি ভিন্ন দামে। সবচেয়ে ছোট আকারের রুটি মেকারের দাম তিন হাজার ৮৫০ টাকা। অন্য তিনটি আকারের দাম যথাক্রমে সাড়ে চার হাজার, সাড়ে পাঁচ হাজার ও আট হাজার টাকা। পলি পেপার বদলাতে হয় ১৫ দিন অন্তর। খাবার হোটেলের উপযোগী সবচেয়ে বড় সাইজের রুটি মেকারের সঙ্গে দেওয়া হয় এক বছরের প্রয়োজনীয় পেপার। বাসায় ব্যবহার উপযোগী তিনটি আকারের রুটি মেকারের সঙ্গে দেওয়া হয় তিন থেকে পাঁচ বছরের ব্যবহার উপযোগী পেপার। হুমায়ুন কবীর জানান, এই পেপারই রুটি মেকারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ। এটির মাধ্যমেই রুটি যথাযথ আকার পায়। পরবর্তী সময়ে যেকোনো গ্রাহক এটি তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে হুমায়ুনের রুটি মেকার। বিপণনের জন্য রাজধানী ঢাকায় খোলা হয়েছে একটি কার্যালয়। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এ রুটি মেকার যাচ্ছে ইংল্যান্ড, দুবাই, ভিয়েতনাম, কানাডাসহ বেশ কিছু দেশে।

 

লাভের হিসাব

হুমায়ুন কবীর জানান, বাজারে পাওয়া রুটি মেকারে শুধু কাঁচা আটার রুটি হয়। এই রুটি মেকারে সিদ্ধ ও কাঁচা-উভয় আটার রুটি হয়। এ ছাড়া ফুচকা, লুচি, ভেজিটেবল টোস্ট, চালের রুটি, গার্লিক রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের রুটি ও আটা-ময়দাজাত খাবার তৈরি করা যায়। প্রতি মাসে গড়ে বিক্রি হয় ১০০টি রুটি মেকার, যার দাম প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মাসে লাভ থাকে প্রায় এক লাখ টাকা। এলাকার অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দিয়েছে এই রুটি মেকার কারখানা। এখানে কাজ করেন শ্যামল কুমার মিত্র, সুফিয়া খাতুনসহ অনেকে। তাঁরা জানান, কারখানায় কাজ করে প্রতিদিন আয় করছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

 

তথ্যসূত্র : কালের কণ্ঠ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!