আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
প্রিন্সেস ডায়ানা। ব্রিটিশ রাজবধূ। ক্ষণজন্মা এ মানুষটির আজ (৩১ আগস্ট ) ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৭ সালের এ দিনে ফ্রান্সে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লসের সাথে ১৯৮১ সালে বাগদানের পর থেকে ১৯৯৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডায়ানাকে বলা হত বিশ্বের সবচে’ খ্যাতিমান নারী। তার জীবদ্দশায় তাকে বলা হতো বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী। সৌন্দর্য ও মধুর স্বভাবের জন্যই শুধু নয়, মানুষের সেবা ও স্থল মাইন ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য তিনি জায়গা করে নেন মানুষের মনে। ডায়ানার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেসের গেটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি।
তাঁর নানা গাউন, ককটেল ড্রেস, কস্টিউম ইত্যাদি আজ অবধি নিলামে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হয়। ফ্যাশন ছিল প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি। লন্ডনের একটি প্রদর্শনীতে ঠিক সেই সত্যটাই যেন প্রকাশ পেয়েছে।
‘কুইন অফ হার্টস’
সামনে তাঁর সেই কিংবদন্তিপ্রতিম ‘ভেরসাচে’ ড্রেস , লেডি ডায়ানা ১৯৯১ সালের একটি ফটো শুট-এ যা পরেছিলেন। এই ড্রেসটি নাকি লেডি ডাই-এর জন্য জান্নি ভেরসাচে-র প্রথম সৃষ্টি। দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। ড্রেসটি ২০১৫ সালের একটি নিলামে দু’লাখ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়।
ফ্যাশনের আয়নায় জীবন
আশির দশকের ঝালর আর লেস দেওয়া সব ‘রোম্যান্টিক’ ড্রেসের পর আসে ফ্যাশন ডিজাইনারদের সৃষ্ট ইভনিং ড্রেস-এর যুগ। প্রিন্সেস ডায়ানা সেই সান্ধ্য পোশাককে কূটনীতির অস্ত্রে পরিণত করেন। নব্বই-এর দশকের গোড়ায় যখন তাঁর দাম্পত্য জীবনে সংকটের ছায়া ঘনাচ্ছে, তখন তিনি কি পরছেন, সেটা ডায়ানার পক্ষে হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতা ও ক্ষমতার প্রতীক।
সূচনায়…
লেডি ডায়ানা স্পেন্সার ফ্যাশনের জগৎ সম্পর্কে বিশেষ জানতেন না। তাঁর নিজের একটি ফ্রক, একটি ব্লাউজ ও একজোড়া ভালো জুতো ছিল – বাকিটা নাকি তিনি বান্ধবীদের কাছ থেকে ধার করতেন। এই হালকা গোলাপি রঙের শিফন ব্লাউজটি তিনি পরেছিলেন ১৯৮১ সালে, তাঁর প্রথম সরকারি পোর্ট্রেট তোলার সময়। বাদামি রঙের টুইড কস্টিউমটি তিনি পরেছিলেন বালমোরালে তাঁর মধুচন্দ্রিমায়।
চার্লসের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায়
গোড়ায় তিনি ছিলেন শুধু প্রিন্স চার্লসের সহধর্মিনী। ১৯৮১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে চার্লসের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবার পর ডায়ানাকে ধীরে ধীরে তাঁর নতুন জীবন ও ভূমিকায় অভ্যস্ত হতে হয়। যতো তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, ততোই তাঁর পোশাক আরো বেশি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হয় ওঠে।
পরিচ্ছদই বার্তা
যত তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, ততই ডায়ানা তাঁর পোশাকের মাধ্যমে কূটনৈতিক বার্তা দিতে শুরু করেন। যেমন একবার সৌদি আরব সফর করার সময় তাঁর রেশমি পোশাক বাজপাখির ছবি দিয়ে সাজানো ছিল – কেননা বাজপাখি সৌদি আরবের প্রতীক।
ট্রাভোল্টার ড্রেস
লন্ডনে ডায়ানার পোশাক-আশাকের প্রদর্শনীতে সবচেয়ে চোখধাঁধানো ড্রেস সম্ভবত ভিক্টর এডেলস্টাইন-এর ডিজাইন করা একটি নীল মখমলের গাউন। এই ড্রেসটি পরে ডায়ানা ১৯৮৫ সাল হোয়াইট হাউসে জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে নেচেছিলেন। এর দু’বছর পরে জার্মানির বন শহরে তাঁকে এই ড্রেসটি পরতে দেখা যায়।
ফ্যাশন আইকন হবার পথে
তাঁর আত্মবিশ্বাস যত বাড়তে থাকে, ততই নিজের ভাবমূর্তি যে কী হবে, তা নিজে নির্ধারণ করতে ও পোশাকের মাধ্যমে তা ব্যক্ত করতেও শুরু করেন ডায়ানা। তাঁর প্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন ক্যাথেরিন ওয়াকার। ওয়াকার প্রথমে বিভিন্ন ইভনিং গাউন ও পরে সুদৃশ্য দিনের কস্টিউমে সাজান ডায়ানাকে, যা পরে ডায়ানা নানা চ্যারিটি বলে যেতেন: স্যাভয় হোটেলে ডিনার থেকে শুরু করে এইডস রোগাক্রান্তদের পরিদর্শন অবধি।
ফটোগ্রাফারদের প্রিয়
ডায়ানার সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সম্পর্ক ছিল প্রেম ও বৈরিতার। কখনো তিনি পাপারাৎসিদের বিরুদ্ধ অভিযোগ করতেন, কখনো বা জেনেশুনে মিডিয়ায় গোপন ও অন্তরঙ্গ খবর ছড়াতেন। ডায়ানাকে ঘিরে একটা আস্ত শিল্প – বা ব্যবসা – গড়ে ওঠে, যাদের কাজই ছিল ডায়ানার ছবি তোলা আর তাঁর ‘গোপন খবর’ ফাঁস করে অর্থোপার্জন করা।
প্রিন্সেস থেকে কুইন অফ হার্টস
১৯৯২ সালে চার্লস আর ডায়ানার বিচ্ছেদের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে ডায়ানার ‘ওয়ার্ড্রোবের’ প্রকৃতিও যেন বদলে যায়: প্রিন্সেস অফ ওয়েলস-এর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এক ‘পিপলস প্রিন্সেস’ – জনগণের রাজকুমারী – যার অকালমৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার যাকে কুইন অফ হার্টস বলে অভিহিত করেছিলেন।
আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ এক নারী
প্রদর্শনীর শেষ কামরাটিতে ডায়ানার প্রখ্যাততম ইভনিং গাউনগুলির মধ্যে পাঁচটি রাখা আছে। স্টার ফটোগ্রাফার মারিও টেস্টিনো-র সঙ্গে একটি ফটো সেসনে এই ড্রেসগুলি পরেছিলেন ডায়ানা। সেই কামরাটিতেই ঝুলছে ডায়ানার একটি আনন্দ ও আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ প্রতিকৃতি, যার বক্তব্য হলো, আমি নিজেকে নিয়ে সুখি।
সূত্র : ফ্যাশন আইকন লেডি ডায়ানা [ডয়চে ভেলে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭]