নিকলীতে বাড়ছে আত্মহত্যা! প্রতিরোধে কিছু ভাবনা

আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।

আত্মহত্যার ঘটনা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে নিকলীতে। ৬ নভেম্বর ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ নারী আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ১৫ এপ্রিল উপজেলার পাড়াবাজিতপুর গ্রামের ইমান আলীর ছেলে, ২ দিন পর ১৭ এপ্রিল সিংপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিগা গ্রামের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী আকাশী নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন।

কোরবানি ঈদের রাতে ১ সেপ্টেম্বর জারুইতলা ইউনিয়নের হাছান আলীর ছেলে শাহজাহান ও নিকলী সদরের কামারহাটি গ্রামের আলাল ওরফে বোতল শাহ আত্মহনন করেন। সব মিলিয়ে ২০১৭ সালে গত ১১ মাসে ৭ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

গত ৫ বছরের হিসাব এক সাথে করলে তা হয়তো ২৫ সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে। পত্রিকার ছাপা সংবাদে ২০১১ সালে ১ ছাত্রী ও জারুইতলা ইউনিয়নের এক কিশোর সালিশের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানা যায়।

২০১৪ সালে গুরুই ইউনিয়নের ১ কিশোরের আত্মহত্যার সংবাদ ছাপা হয়। ২০১৫ সালে আলিয়াপাড়া এক যুবক ও দামপাড়া ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের এক ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অতীতের তুলনায় এ বছর আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়ারও কোন সুযোগ নেই।

আত্মহত্যা কিভাবে রোধ করা যায় এ নিয়ে নিকলীর বোদ্ধা মহলের ভাবা উচিত। কিশোরগঞ্জ জেলার অন্য উপজেলার চাইতে এ উপজেলায় যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি তা এ বছরের ৭টি প্রাণ ঝরে যাওয়ায় প্রতিয়মান হয়।

আত্মহত্যা এমন একটি নিকৃষ্ট কাজ যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সর্বোপরি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যন্ত অগ্রহণযোগ্য অনৈতিক ও গর্হিত কাজ। তাই ভুল করে হলেও কোনো দিন জীবননাশের পরিকল্পনা করা উচিত নয়। অন্যকেও আত্মহত্যার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

আত্মহত্যার কারণগুলো
মানসিক অবসাদ, যৌতুক, পারিবারিক কলহ, নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, হতাশা ও অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা, নেশায় আসক্তি, জীবনের লক্ষ্য খুঁজে না পাওয়া, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, জীবন-জীবিকার সংকীর্ণতা, সামাজিক বৈষম্য, ইভ টিজিং, যৌন অত্যাচার, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, প্রেমে ব্যর্থতা, আত্মমর্যাদাহীনতায় ভোগা, রাতারাতি ধনী হওয়ার উচ্চাভিলাষ, অলীক স্বপ্নবিলাস, পরীক্ষায় ফেল, অমতে বিয়ে, পরকীয়া, প্রিয় দলের পরাজয়, অপসংস্কৃতির থাবা ইত্যাদি অন্যতম।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিজেকে ভালোবাসা আত্মহত্যা থেকে বাঁচার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাই এমন মানুষদের আত্মিক ও দৈহিক চিকিৎসা করানো অপরিহার্য। পারিবারিক পরিমণ্ডলে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ যেমন কাম্য নয়, তেমনি সন্তানদের অবাধ ও স্বাধীন জীবনাচারে অভ্যস্ত করে তোলাও কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বও কিন্তু কম নয়। দরিদ্রতা ও সামাজিক বৈষম্য রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব কেবল রাষ্ট্রেরই। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ খুবই জরুরি। বখাটেদের দমন, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নির্যাতিত নারীদের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। এ অবক্ষয় রোধে পাঠ্য বইয়ে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষার ব্যবস্থা আরো জোরদারের বিকল্প নেই। আদর্শ ও সুস্থ চিন্তার বিকাশে ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। মানুষের মধ্যে এ বোধ তৈরি করতে হবে। প্রেমে ব্যর্থতা মানেই সব কিছু হারিয়ে যাওয়া নয়। জীবন একটি চলমান প্রক্রিয়ার নাম। আর প্রত্যেকের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জোড়া বা বিপরীত লিঙ্গ। এক চিলতে শান্তির জন্য মানুষ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছে। বারবার প্রতারিত হচ্ছে মরীচিকা দেখে। অথচ শান্তি রয়েছে আল্লাহর স্মরণে, ধর্ম পালনে। আল্লাহর রহমতের আশা ও তাঁর শক্তিমত্তার ওপর ভরসাই দিতে পারে পরিপূর্ণ জীবনের অনাবিল আনন্দ ও সাফল্য। অশান্ত মানবতাকে ইসলাম শান্তির শামিয়ানায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

লেখক : সহকারী শিক্ষক, নিকলী জিসি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র : কালের কণ্ঠ

Similar Posts

error: Content is protected !!