নদীভাঙ্গন থামছেই না

আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।

উজান থেকে তোড়ে আসা পানির প্রবাহে নিকলীর হাওরের গ্রাম ছাতিরচর ও সিংপুরে নদীভাঙ্গন থামছে না। ধনু নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে দিনে দিনে ছোট হয়ে গেছে সিংপুর। গত ১৫ বছরে প্রায় ৫০০-র অধিক ঘরবাড়ি, স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পড়েছে। গৃহহীন মানুষেরা পাড়ি জমিয়েছে চট্রগ্রাম, আলীগন্জে। কেউ বস্তি, কেউ ইটখলার শ্রমিক, কেউ বা কুলি মুজুরী করে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কেউবা ভাঙ্গনের ভয়ে আগেই গ্রাম ছেড়ে দামপাড়া, নিকলী, করিমগন্জ, কিশোরগন্জে বাড়ি কিনছে।

ঘোড়াউত্রা নদীর ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে ছাতিরচর
ঘোড়াউত্রা নদীর ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে ছাতিরচর

নদীভাঙ্গনে অসহায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া নুরজাহান (৫৫) এই প্রতিবেদকের কাছে তার কষ্টের কথা জানান, “১০ বছর আগে নদী বাইংগ্যা নিছে বাড়ী, অহনও নতুন বাড়ি করতে হারছি না। আমডার এক আত্মীয়র বারিত তাহি।” প্রতিবছর নতুন নতুন বাড়ি ভাঙ্গছে। ঘরবাড়ি হারানোর  আতংকে জীবন পার করছে পাতারকান্দী, বড়হাটি, স্কুলহাটি, উত্তর হাটি আর চৌধুরী হাটির মানুষ।

সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দীন জানান, এবছর বর্ষার শুরুতে সিংপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। আরো  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাজার ও শতাধিক বাড়ীঘর নদীভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে।

নদীভাঙ্গনের শিকার সিংপুর গ্রাম

এদিকে ঘোড়াউত্রার তীব্র গড়ানে প্রতিদিনই ভাঙ্গছে ছাতিরচর গ্রাম। জোয়ানশাহী হাওরের বুকে দাড়িয়ে থাকা গ্রামটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে দিনে দিনে ছোট হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো মানুষ। তারা কেউ চট্রগ্রাম, ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করছেন। কেউ নতুন করে আবাসন গড়েছে বাজিতপুর, নিকলী, হিলচিয়া গ্রামে। প্রবীণ শিক্ষক কাজী নুরুল ইসলাম জানান, ছাতিরচর গ্রাম এক সময় অনেক বড় ছিল। নদীভাঙ্গনে প্রায় ১ কিলোমিটারের বেশী অংশ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার অনুদানে পূর্বপাশ দিয়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ হলেও ভাঙ্গনের হাত থেকে বাচতে পারছে না ছাতিরচরের গ্রামগুলো। সরেজমিনে পরিদর্শনের সময়  ভুক্তভোগীরা নদীভাঙ্গনের কবল থেকে বাচার জন্য সরকারীভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান। তারা আরো বলেন, নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য নদী ও খাল পুন:খনন করা দরকার।

সিংপুর ষরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙ্গে গেছে

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!