গুরই গণহত্যা দিবস

এম হাবিবুর রহমান ।।
একাত্তরের এই দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) নিকলী উপজেলার গুরই-পূর্বপাড়া গ্রামে পাকবাহিনী দ্বারা সংঘটিত হয় নৃশংসতম এই হত্যাকাণ্ড। ওইদিন আগুনে পুড়িয়ে ১জন ও গুলি করে ২৪জন মোট ২৫জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন গ্রামের সমস্ত ঘর-বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে গ্রামটিকে শ্মশানে পরিণত করেছিল তারা।
৬ সেপ্টেম্বর ভোরের দিকে পার্শ্ববর্তী হিলচিয়া গ্রামে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে খবর আসে যে, ওইদিন নিকলী সদর থেকে পাকবাহিনী এসে গুরই গ্রামে হামলা চালাবে। সাথে সাথেই মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যে নৌকায় স্থানীয় কতিপয় রাজাকারসহ একটি লঞ্চভর্তি পাকবাহিনী গ্রামের উত্তর দিকে নদীঘাটে এসে নেমে গ্রামের ভিতরে ঢুকে লুণ্ঠণ শুরু করে।
মুক্তিবাহিনীরাও দু’টি নৌকা নিয়ে দু’দিক থেকে এসে গ্রামে ঢুকে পড়ে। শুরু হয় যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিতে আক্রমণে কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এতে পাকবাহিনী আরো প্তি হয়ে উঠে। বেতার-বার্তা মারফত আরো সৈন্য পাঠানোর জন্য নিকলী, সরারচর ও বাজিতপুরে খবর পাঠায়। প্রায় দেড়ঘন্টা যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় এবং রাইফেল বন্ধ হয়ে পড়ায় একপর্যায়ে তারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটায় এবং কয়েকজন পাকসেনার মৃত্যু ঘটায় অতিরিক্ত সৈন্যবল নিয়ে গ্রামের ভীত-সন্ত্রস্ত নিরীহ লোকজনের ওপর পাকসেনারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় অন্তত ২৫ জন নিহত হন। এরা হলেন- ইয়াকুব আলী, হাফিজউদ্দিন, সুন্দর আলী, আব্দুল আলী, লাল হোসেন, ফুলু মিয়া, রুসমত আলী, আফতাবউদ্দিন (তারা মিয়া), ভেলু মিয়া, জিন্নত আলী, চেন বানু, সুরুজ আলী, মোহর বানু (মুদির মা), মুন্তাজ, সুনামুদ্দিন, ছুবেদ আলী, জোবেদা বেগম, ইছব আলী, গতা মিয়া, সরাফত আলী, মর্তুজা আলী, মধু মিয়া, সাহেদা বানু, আব্বাস আলী(আবু) ও আব্বাস আলী। শুধু হত্যা করেই ান্ত হয়নি, উত্তেজিত পাকসেনারা পূর্বপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগও করে।
ওই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ আলী মেম্বার (৬৩) জানান, ওই দিন গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি মালামালসহ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। ৩/৪ দিন পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল। এই গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও গ্রামে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। এখনও বছর ঘুরে এই দিনটি এলে দিবসটির ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে হত্যাকারীদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীরা ভয়ে আঁৎকে উঠেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!