শিরকমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখুন : আল্লামা আহমদ শফী

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।

তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ এমন এক জিনিস যা মানুষকে বিন্দু থেকে সিন্ধুতে, জিরো থেকে হিরোতে, যমীন থেকে আকাশসম মর্যাদায় নিয়ে যায়। যার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের পারমিশন পাওয়া যায়। শত বছরের পাপীষ্ঠ ব্যক্তি নিমিষেই পূতপবিত্র হয়ে যায় এই তাওহিদের কারণে। আখিরাত বা পরকালের সফলতার এটাই একমাত্র সোপান। এই ভীত দাঁড়িয়ে থাকে এক খোদার বিশ্বাসের ওপর। এই বিশ্বাসের সোপানে যে আরোহণ করবে সে পরকালে মুক্তি পাবে। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু যে জিনিসটি এমন মহান ও সৌভাগ্যময় সোপানকে নিঃশেষে ধ্বংস করে দেয় তার নাম শিরক! আগুন যেভাবে কাঠকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি ধ্বংস করে শিরক ঈমানকে। কাজেই ঈমান হতে হবে শিরকমুক্ত। নইলে বাঁচার কোনো উপায় নেই।

এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল দুনিয়াতে এসে সকলেই তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। এই দাওয়াত দিতে গিয়ে অজস্র পয়গাম্বর শাহাদাত বরণ করেছেন। তবুও তাঁরা তাওহিদের বিষয়ে কারো সাথে আপোষ করেননি। এই তাওহিদকে সমূলে ধ্বংস করে দেয় শিরক। শিরকযুক্ত ইবাদত তো দূরের কথা ঈমানও গ্রহণযোগ্য নয়।

শিরকের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ১৬৬ স্থানে আলোচনা করেছেন। বলেছেন তার ভয়াবহতার কথা, তা অমার্জনীয় হওয়ার কথা। বলেছেন মুশরেকরা চিরদিনের জন্য জাহান্নামের অতল গহ্বরে শাস্তির শৃঙ্খলে বন্দী থাকবে। শিরক মহাঅপরাধ, মহাযুলম, মহাবিপর্যয় সৃষ্টিকারী, বিধ্বংসী ও মহাঅন্যায়। এই শিরকের অশুভ ছোবল থেকে ঈমান-আমলকে হেফাযত করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের অজান্তে বেশ কয়েকটি শিরক বাংলাদেশের প্রতিটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। মানুষ জেনে-না জেনে এসব শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এমনকি যারা নামাজ-রোজা আদায় করেন তাঁরাও এর ব্যাপকভাবে চর্চা করছেন। মূর্তি নেই কিন্তু তার নাম মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। এসব বিজাতীয় সংস্কৃতির বিষাক্ত ফলাফল।

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কোন ছেলে-মেয়ে ভালো কাজ করলে বাবা-মা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ না বলে খুশিতে বলে উঠছেন- লক্ষ্মী বাবা, লক্ষ্মী মা, লক্ষ্মী সোনা, লক্ষ্মী বউ ইত্যাদি। দোকানদাররা বলছেন, ভোক্তারা আমাদের লক্ষ্মী, ক্রেতারা আমাদের লক্ষ্মী।

এছাড়াও মাজারের নামে জন্তু জবাই করা, মাজারের মৃত ব্যক্তির নামে মান্নত করা, কবরে সেজদা দেয়া, কবরকে চুমু খাওয়া, ভণ্ড পীর ও তাদের মুরিদদের শরীয়ত বিমুখতা, মাজারে সেজদা দেয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও মঙ্গল শোভাযাত্রা, এপ্রিলফুল পালন করা, ভণ্ডপীরদের তৈরি শিরক ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করছে।

তবে উলামায়ে দেওবন্দ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এসব শিরক ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে লৌহকঠিন। ধর্মদ্রোহী শিক্ষা ব্যবস্থা, আদালত প্রাঙ্গন থেকে থেমিসের মূর্তি অপসারণ, সংবিধানে বিসমিল্লাহ বলবৎ রাখা ও নাস্তিক ব্লগারদের কণ্ঠরোধসহ আরও অনেক অপকালচারের বিরুদ্ধে উলামায়ে দেওবন্দ আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, আগামীতেও এ পথে অবিচল থাকবে ইনশাআল্লাহ।

হে দ্বীন-ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী আলেম সমাজ! এসব শিরকের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন শপথ নিন। প্রতিরোধ করুন এসবের। মসজিদের খুতবায়, মাহফিলে, বক্তব্যে, সভা-সেমিনারে। মৌখিকভাবে হোক কিংবা লিখিত আকারে।

হে সম্মানিত খতীবগণ! আপনারা জুমার নামাযে এসব শিরকের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখুন। আল্লাহ তা’আলা আপনাদের সহায় হোন।

Similar Posts

error: Content is protected !!