নতুন ৭টি বিশ্ব ঐতিহ্যের নাম ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো নতুন সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্যের নাম ঘোষণা করেছে। শুক্রবার বাহরাইনে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪২তম অধিবেশনে এসব নতুন নাম ঘোষণা করা হয়। কেনিয়ার থিমলিচ ওহিঙ্গা, দক্ষিণ কোরিয়ার পাহাড়ি মঠ, ওমানের প্রাচীন প্রাচীর শহর কালহাত, সৌদি আরবের আল আহসা মরূদ্যান, জাপানের প্রাচীন খ্রিস্টীয় গ্রাম, ভারতের মুম্বাইয়ের গোথিক ও আর্ট ডেকো ও ইরানের সাসানীয় যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

জাপানে খ্রিস্টানদের গোপন ধর্মীয় স্থান
নাগাসাকি অঞ্চলের গোপন খ্রিস্টান ধর্মীয় স্থানগুলোর ১২টি অংশ, জাপানের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা নাগাসাকি ও কুমামোতোয় অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে হারা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, ওউরা গির্জা এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের উপস্থিতি থাকা গ্রামগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এই জায়গাগুলো, সপ্তদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গোপনে ধর্ম পালনের ইতিহাস প্রদর্শন করছে। ওই সময় লোকজন, প্রচলিত জাপানি সমাজ এবং বিদ্যমান ধর্মগুলোর সঙ্গে সহাবস্থান করার পাশাপাশি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে খ্রিস্টান ধর্মীয় বিশ্বাস হস্তান্তর করে এসেছে।

মুম্বাইয়ের গথিক ও আর্ট ডেকো
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই শহরের ওভাল মেইডেন এলাকায় অবস্থিত যত ভিক্টোরিয়ান গথিক ও আর্ট ডেকো ধাঁচের স্থাপত্য রয়েছে সেগুলো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। মুম্বাইয়ের ফোর্ট অঞ্চলে এই ধরনের স্থাপত্য অনেক বেশি চোখে পড়ে। ভিক্টোরিয়ান গথিক স্টাইলে এসব সৌধ নির্মিত হয়েছিল উনিশ শতকে এবং আর্ট ডেকোগুলো নির্মাণ করা হয় বিংশ শতকে। আরব সাগরের তীর বরাবর যেন সারিবদ্ধভাবে এসব অট্টালিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই এই জায়গাটিকে একসময় এসপ্ল্যানেড বলা হতো। মুম্বাই শহরে ৯৪টি সৌধ এই ধাঁচে তৈরি করা হয়েছে।

এই ধাঁচের যেসব সৌধ আছে সেগুলোর মধ্যে বিশষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বম্বে হাইকোর্ট, মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি সিভিল ও সেশনস কোর্ট, ইরস থিয়েটার, রাজাভাই ক্লকটাওয়ার, ওল্ড সেক্রেটারিয়েট, ইউনিভার্সিটি গ্রন্থাগার ও কনভেনশন হল, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট অফিস, ওয়াটসনস হোটেল, ডেভিড স্যাসন গ্রন্থাগার, এলফিস্টোন কলেজ প্রভৃতি।

কেনিয়ার থিমলিচ ওহিঙ্গা
এই বিশ্ব ঐতিহ্যের অবস্থান দেশটির মিগোরি শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে। ইউনেস্কো জানায়, শুষ্ক পাথরের তৈরি বসতিটি সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত। বসতিটি স্থানীয় বাসিন্দা ও গবাদিপশুর জন্য ছিল দুর্গের মতো। এর সঙ্গে তাদের সামাজিক মর্যাদার সম্পর্ক ছিল। তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে ‘সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং সম্ভবত সবচেয়ে বড় নিদর্শন এটি’। শুষ্ক পাথরের তৈরি পরিবেষ্টিত স্থাপনার সবচেয়ে বড় ব্যতিক্রমী নিদর্শন এটি। ভিক্টোরিয়া হ্রদ এলাকার আশপাশে যেসব যাযাবর গোষ্ঠী বাস করত তারাই সম্ভবত এটি তৈরি করেছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এসব স্থাপনা ব্যবহৃত হয়েছে।

ওমানের প্রাচীন শহর কালাহাত
ওমানের পূর্ব উপকূলে এই প্রাচীন বন্দর নগরীর অবস্থান। তালিকায় রাখার বিষয়ে ইউনেস্কো বলেছে, একাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে শহরটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে বন্দরনগরী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীনকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত সমুদ্রপথে যে বাণিজ্য রুট ছিল তা মনে করিয়ে দেয় ওমানের এই বন্দরনগরী।

সৌদি আরবের আল আহসা মরূদ্যান
ইউনেস্কো জানায়, আরব উপদ্বীপের পূর্বাঞ্চলীয় মরূদ্যান এলাকাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল একসময়। এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বাগান, খাল, ঝরনা, কূপ ও হ্রদের পাশাপাশি মরূদ্যানে কিছু পুরনো বাড়িঘরের স্থাপনাও রয়েছে। আরব উপদ্বীপের এ অংশে মানুষের বসবাস কবে থেকে শুরু হয়েছে তার একটি ধারণা দেয় এই মরূদ্যান। এখন সেখানে কিছু ঐতিহাসিক দুর্গ, মসজিদ, কূপ ও পানি ব্যবস্থাপনার কিছু উপকরণ রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পাহাড়ি মঠ
দক্ষিণ কোরিয়ার সানসা পাহাড়ি মঠগুলো সপ্তম শতক থেকে ধর্মীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রে রয়েছে। সাতটি মন্দিরের রয়েছে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ, লেকচার হল, প্যাভিলিয়ন ও বৌদ্ধ কক্ষ। ইউনেস্কো এই স্থানগুলো পবিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ইরানের সাসানীয় প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন

ইরানের সাসানীয় সাম্রাজ্যের দুর্গের মতো অবকাঠামো, প্রাসাদ ও নগর পরিকল্পনাসহ ফার্স প্রদেশের ৮টি প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র স্থান পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যে। তৃতীয় থেকে সপ্তম শতাব্দীতে এসব স্থান গড়ে উঠেছিল।

ইউনেস্কোর নীতি অনুসারে প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি পরিচয়বাহী নম্বর দেওয়া হয়। বর্তমানে এই নম্বরের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে যদিও স্থানের সংখ্যা আরও কম। প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী স্থানের সমুদয় সম্পত্তি ও জমির মালিক ওই স্থানটি যে দেশে অবস্থিত সেই দেশ। তবে এই স্থানগুলো রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর। তাই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান প্রকল্পের আওতাভুক্ত সব রাষ্ট্রই প্রতিটি স্থান রক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারে। কিছু বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউনেস্কো গঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য ফান্ড থেকে অর্থ সহযোগিতা দেওয়া হয়। সূত্র : বিবিসি।

Similar Posts

error: Content is protected !!