ক্যান্সারের নতুন ওষুধ আবিষ্কার করলেন হতদরিদ্র ফিনাজ খান!

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করে কেমোথেরাপির নতুন ওষুধ আবিষ্কার করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার বেলগাছিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফিনাজ খান। ২৩ বছর বয়সী এই গবেষকের সাফল্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

আমেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী রসায়নে স্নাতকোত্তর করার সময়ই ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেন। নিজের গবেষণায় কেমোথেরাপির নতুন ওষুধ আবিষ্কার করেন ফিনাজ। তার গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি। শিগগিরই ফিনাজের তৈরি কেমোথেরাপির নতুন ওষুধ বাজারে পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে লন্ডনের এই সংস্থা।

হতদরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের সন্তানের এই অসামান্য কৃতিত্বে খুশির হাওয়া বইছে বেলগাছিয়া জুড়ে। বরাবরই মেধাবী ছাত্রী ফিনাজ খান। স্কুলজীবন থেকেই আলাদা কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন ছিল তার। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এপিজে আব্দুল কালাম পশ্চিমবঙ্গের এই তরুণী গবেষকের আদর্শ।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে একবার প্রজেক্টারের মাধ্যমে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বক্তব্য শুনেছিলেন ফিনাজ। তার কথায়, ‘সেই দিনই মনে হয়েছিল, আমিও চেষ্টা করলে কিছু করতে পারি। তখন থেকেই মনে হয়েছিল এমন একটা কিছু করব যেটা মানুষের বা সমাজের কাজে আসবে।’

সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেন তিনি। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে গুরুদাস কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে গ্র্যাজুয়েশন করে আমেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনাজ খান ছিলেন প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মাস্টার্সে তার প্রজেক্টের বিষয় ছিল ক্যান্সার। তখনই নতুন কিছু করার জেদ চেপে বসে ফিনাজের মধ্যে।

তিনি বলেন, ‘কেমোথেরাপিতে দু’ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। এক ধরনের ওষুধ তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করলেও, আর এক ধরনের ওষুধ কাজ করতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। তবে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি দিলে শরীরের কোষগুলো মারা যায়। মাথার চুল উঠে যায়। একইসঙ্গে বেশ ব্যয়বহুল চিকিৎসা।’

‘ক্যান্সার নিয়ে প্রজেক্ট পাওয়ার পর এই জায়গাটা আমাকে ভাবিয়েছিল। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া স্বল্প খরচে কীভাবে রোগীদের কেমোথেরাপির ওষুধ তৈরি করা যায়, তা নিয়ে শুরু করলাম গবেষণা। সেই গবেষণায় আমার ম্যাডাম সাহায্য করেন। গবেষণা করতে গিয়ে দেখলাম, সেটা সম্ভব। একটিমাত্র ওষুধের মাধ্যমে শরীরের যে অংশে ক্যান্সার হয়েছে, সেখানে কেমোথেরাপি দেয়া সম্ভব এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করবে এটি। একইসঙ্গে এই ওষুধের কাজ দীর্ঘস্থায়ী হবে।’

তিনি বলেন, ‘এর ফলে খরচ অনেক কম হবে। এছাড়াও শরীরের কোষ জীবিত থাকবে। এটিই আমার আবিষ্কার। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির মতো সংস্থা স্বীকৃতি দেয়ায় আমার পরিশ্রম সফল হয়েছে।’ এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে ক্যান্সারের টিকা আবিষ্কার নিয়েও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন ফিনাজ।

ফিনাজ খানের বাড়িতে পড়াশোনা করার মতো পরিকাঠামো নেই; নেই চেয়ার টেবিল। বাবা মা ও তিন বোনের সংসার। বোনদের মধ্যে তিনিই বড়। অভাব-অনটন প্রতি মুহূর্তে কড়া নাড়ছে ঘরে। বাবা ঘুরে ঘুরে সাবান বিক্রি করেন। মা ভীষণ অসুস্থ। ঠিক ভাবে চলতে পারেন না। অভাবে মায়ের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি।

এমন দরিদ্র পরিবার থেকে বিশ্ব দরবারে নাম উঠে আসায় খুশি ফিনাজের বাবা-মা। বাবা মায়ের কথা আসতেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন ফিনাজ। এত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা থেমে নেই তিন বোনের। ফিনাজ নিজে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যান্সার টিকাকরণ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এড করছেন। দুই বোনের একজন বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষে, অন্যজন প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছে।

ফিনাজের বাবা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন কষ্টের মধ্যে তিন মেয়ের স্বপ্নকে সফল করতে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন। অসুস্থতা নিয়েই তিন মেয়ের জন্য পরিশ্রম করছেন মা। সংসারের এই পরিস্থিতি দেখে পড়াশোনার মধ্যেই চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছে ফিনাজকে। বেনিয়াপকুরের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি।

এখন তার লক্ষ্য ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী ছাত্রীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি কেউ। ফিনাজের আর্তি, রাজ্য সরকার যদি তাকে সহযোগিতা করে, তাহলে ভালোভাবে পিএইচডি করতে পারবেন। টিডিএন।

সূত্র : জাগো নিউজ, ৫ নভেম্বর ২০১৮

Similar Posts

error: Content is protected !!