কষ্টে জীবন যাপন করছেন ওস্তাদ লালচান

মাশুকুর রহমান ঝুটন ।।
উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সাকুল্য ক্রোধ বিভেদ, বিদ্বেষ ডিঙিয়ে আমরাই কণ্ঠে তুলে নিই যেৌথতার জয়ধ্বনি। প্রাণৈক্যের লেনদেনে খোদাই করি স্বপ্নসঞ্চারী উদ্যোগ। যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে চিরায়ত জীবন এবং যাপনের টানাপোড়েন। অতঃপর প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ স্মৃতিরও মন্থন- মনে মনে শৈশব কৈশোর জাগে, জাগে অনেক স্মৃতি। এই ধারাবাহিকতায় ছুটে গিয়েছিলাম লালচান ওস্তাদের কাছে। বয়সের ভারের চেয়ে রোগে শোকে ভুগছেন আর অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকেন সমাজের সচেতন সংস্কৃতিসেবী বিত্তবানদের দিকে; একটু সাহায্যের আশায়। আমরা যদিও কোনো সাহায্য করতে পারিনি, তবু তার কিছু কথা ব্যক্ত করার অভিপ্রায়ে লালচান ওস্তাদের জীবনের কিছু খণ্ড অংশ অখণ্ডভাবে তুলে ধরার মানসে লিখছি।
লালচান ওস্তাদ। নিকলী তথা ভাটি অঞ্চলের এক প্রচারবিমুখ সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি ওস্তাদ হিসেবে আমরা যাকে চিনি, তিনি হচ্ছেন আব্দুল মান্নান লালচান। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত এ অঞ্চলে গানের তালিম দিয়ে আসছেন। তার পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, জারি-সারি গান এখনো মনন জগতে নাড়া দেয়। এ দীর্ঘ জীবনে তিনি অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত গানের তালিম দেয়ার পাশাপাশি যাত্রাগান এবং বিভিন্ন দলের গানে সঙ্গীতের পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন চমৎকার। তাকে বাদ দিয়ে নিকলীতে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কল্পনা করা যেত না এক সময়। এখন তিনি রোগাক্রান্ত অবস্থায়ও সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে শিল্পকলায় গানের তালিম দিচ্ছেন, শুধুমাত্র মাসে ৫০০ টাকার আশায়। আর এনজিও ঋণের ভারে জর্জরিত ওস্তাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, কেউ খোঁজ নিতে আসে না। বর্তমানে যারা সংস্কৃতি অঙ্গন পরিচালনা করছেন তারাও তেমন সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না।

lalchan_ustad
প্রায় ৪ বছর যাবত অসুস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। এক সময়ের নিকলীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন দাপিয়ে বেড়ানো ওস্তাদ লালচান আজ অসহায়।
ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে তিনি জানালেন, সত্তরের দশকে তিনি ওস্তাদ সুরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের কাছে গানের তালিম নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর শুরু হয় লালচান ওস্তাদের তালিম দেয়া ও বিভিন্ন গানে সুরারোপ করা। তার কাছে গান শিখে অনেকেই বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত। তার পরিচালনা ও সুরারোপের মাধুর্যতায় নিকলী থানা জারি গানে আশি/নব্বইয়ের দশকে (সঠিক সময়টা ওস্তাদ মনে করতে পারেননি) জাতীয় পর্যায়ে পর পর দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
লেখক : আবৃত্তি শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক

Similar Posts

error: Content is protected !!