রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অধ্যক্ষ নারায়ণ কুণ্ডুর অবসর গ্রহণ

নূরে মুন্তাহা, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ।।

সরকারি টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ, রংপুর-এর অধ্যক্ষ নারায়ণ কুমার কুণ্ডু মঙ্গলবার (৯ জুলাই ২০১৯) এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অবসর গ্রহণ করলেন। এদিন কলেজের হলরুমে তাঁর বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর আমজাদ হোসেন।

অধ্যক্ষ নারায়ণ কুণ্ডু ২০১৭ সালের ২৯ জুন সরকারি টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ, রংপুর-এ অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছিলেন। দীর্ঘ দুই বছর সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভেতর-বাইরে ব্যাপক পরিবর্তন করেছেন। কলেজের প্রতিটি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়ায় রূপদান করেছেন। হলরুম ও শিক্ষক মিলনায়তনে সংযোজন করেছেন এয়ারকন্ডিশনার। নানামুখী কর্মব্যস্ততায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রিয় ব্যক্তিত্ব।

নিজের বিদায়ী সংবর্ধনায় নারায়ণ কুণ্ডু বলেন, বিদায় মানে কান্না। ভারাক্রান্ত মন। আমার এমন বিষণ্নতা পছন্দ নয়। তবু এক সময় বিদায় ক্ষণ এসেই পড়ে। দায়িত্ব পালনকালে চেষ্টা করেছি নিজের কাজটা ঠিকমতো করে যেতে। যতটা সম্ভব করেছি, আরো অনেক কিছুই করার ছিলো। আমার সকল অর্জনে সহযোগিতা পেয়েছি সহকর্মীদের কাছ থেকে। আমি তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। আশা করি আমার অবর্তমানে যিনি হাল ধরছেন আরো সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

তিনি আরো বলেন, আমি জীবনে চারজন মানুষের কাছে ঋণী বাবা, মা, বড় ভাই এবং স্ত্রী। ব্যক্তিজীবনে অনেকের কাছেই শেখার চেষ্টা করেছি। এমনকি ভিখারিনীর কাছেও শিখেছি “কেবল নিয়ে গেলেই হয় না, দিতেও হয়”।

পদোন্নতি পেয়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর আমজাদ হোসেন। তিনি বিদায়ী অধ্যক্ষ নারায়ণ কুণ্ডু সম্পর্কে আবেগঘন বক্তৃতায় বলেন, তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। তাঁর প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা, সুসজ্জিত রাখার ব্যাপারগুলো অনুকরণীয়। আমরা চেষ্টা করবো প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর অবদানগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার।

সহকারী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রফেসর নারায়ণ কুণ্ডু তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সফলতার সাথেই সমাপ্ত করেছেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি তাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতায় শিক্ষা পর্যায়ের সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করেছেন।

এছাড়াও সরকারি টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ, রংপুর-এ প্রফেসর নারায়ণ কুণ্ডুর সহকর্মী রাশেদুল হক (সম্পাদক, শিক্ষক পরিষদ) এবং রওশন আলম (সহকারী অধ্যাপক) বিদায়ী অধ্যক্ষ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। “শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে শিক্ষকদেরকেও তিনি যেভাবে প্রতিনিয়ত শিখিয়েছেন, দেখিয়েছেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা তা কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব। আমরা স্যারের এই অবদান চিরদিন মনে রাখবো।”

বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্মৃতিচারণ করেন বিএড অনার্স থেকে এবং বিএড ২০১৯ সেশনের লুৎফুন্নাহার ও নূরে মুন্তাহা শিমু। সদ্য অবসরগ্রহণকারী অধ্যক্ষকে নিয়ে তাদের বক্তব্যে উঠে আসে একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিটি গুণের কথা। হাস্যরস আর আবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থী আর অন্যান্য সহকর্মীকে আনন্দিত করার কথাও তারা উল্লেখ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি একজন শিক্ষকের স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা আর নিবিড় যত্ন ও পরিচর্যার কথা স্মরণ করেন। অসাধারণ মেধা, দক্ষ পরিচালনা আর সুপরামর্শ দানকারী অনুকরণীয় এই মানুষটি তাদের জীবনে যে ছাপ ফেলে গেলেন তা কখনোই ভুলবার নয়। শিক্ষার্থীরা তাঁর প্রতি চির কৃতজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন।

ব্যক্তিজীবনে সদ্য অবসর গ্রহণকারী অধ্যক্ষ নারায়ণ কুণ্ডু দুই পুত্র সন্তানের জনক। বড় ছেলে মালয়েশিয়ায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। ছোট ছেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (EEE) অধ্যয়নরত। স্ত্রী একজন সুগৃহিণী এবং উদ্যোক্তা।

Similar Posts

error: Content is protected !!