পল্লী গাঁও

পল্লী গাঁও

এস এম ইলিয়াস ।।

 

চলো যাই মোর পল্লী গাঁয়ে নরসুন্দার তীরে,
সবুজ শ্যামল প্রকৃতিতে বাবুই পাখির নীড়ে।
মায়ের মতন মমতাময়ী ছোট্ট সোনার গাঁও,
কলিজা তব শীতল হবে একবার যদি যাও।

মায়া-মমতা, ভালোবাসা, স্নেহ দিয়ে ভরা,
অজপাড়াগাঁ তবু সে যে সকল গাঁয়ের সেরা।
নয়ন জুড়ায় এক পলকে নেইকো তারি জুড়ি,
বন-বনানী, গাছ-গাছালী যেন সবুজ পরী।

দক্ষিণা বায়ু দোলা দিয়ে যায় সদা মনের মাঝে,
পাখ-পাখালি গান গেয়ে যায় প্রতি সকাল-সাঝে।
ধান-কাউনের ক্ষেত জুড়ে বাতাস খেলে ঢেউ,
গান গেয়ে মাঝি যায় চালিয়ে পাল তোলা নাও।

ফল-ফলাদি ফুলের বাগান মন মাতানো সুভাষ,
প্রভাত বেলা সারা মাঠ জুড়ে শিশির সিক্ত ঘাস।
আঁকাবাঁকা এক মেঠো পথ যেন বহুদূর গেছে চলে
কত শত মাছ কিলবিল করে খাল-বিলের জলে।

কাঁজল বিলে, পুকুর জলে কলমি-শাপলা হাসে,
বর্ষাকালের অথই জলে গ্রাম খানি যেন ভাসে।
চাঁদনী রাতে মেঘের ফাকে চাঁদ মামা দেয় উঁকি,
রুপকথা আর পরীর গল্প শুনে ঘুমায় খুকি।

অনাবাদি কিছু জমির ভেতর সাপের মতন পথ,
মাঠ পেরিয়ে যায় ছুয়ে যায় মরা গাঙের তট।
প্রভাত বেলায় পূর্ব দিকে সূয্যি মামার হাসি,
রাখাল গরুর পাল লয়ে বাজায় বাঁশের বাঁশি।

সুবিশাল এই নীল আকাশ যেন গাঁয়ে পড়েছে নুয়ে,
ছোট্ট খোকা গড়াগড়ি করে সোনার ধুলোয় সুয়ে।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল সোনার চাইতে খাটি,
কত না উর্বর!, কৃষি নির্ভর আমার গাঁয়ের মাটি।

লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে যায় ছুটে যায় কৃষাণ,
জারি-সারি, পল্লী বাউল গেয়ে ভাওয়াইয়া গান।
ষাড় গরু আর বলদ গাইয়ে চষে জমিতে লাঙল,
মাথার ঘাম পেয়ে ফেলে ফলায় সোনার ফসল।

আলতা রাঙা পায়ে বধুয়া ঢেঁকিতে তুলে তাল,
খনার বচন ও গীতের ছন্দে পাই ঢেঁকি ছাটা চাল।
মা-মেয়ে আর ননদিনী-জা দেখে পরস্পর মাথা,
অবসরে তারা সেলাই করে কত যে নকশীকাঁথা!

পাড়ার সকল ছেলে-মেয়ে যেন সঙ্গী সাথী ভাই,
একসাথে চলি, একসাথে খেলি হিংসা বিভেদ নাই।
শান্তিপ্রিয় মানুষ সবাই, থাকে সবার মুখেই হাসি।
ছবির মতন গ্রাম খানিরে কত যে ভালোবাসি!

 

এস এম ইলিয়াস : ছাত্র, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকাস্থ নিকলী ছাত্রপরিষদ।

Similar Posts

error: Content is protected !!