শেখ মোবারক হোসাইন সাদী, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জ জেলার একজন নিভৃতচারী গুণী শিল্পী এ কে এম আজাদ। অনেকেই শুনে চমকে উঠছেন? এই নামটি কখনো শুনিনি তো! হ্যাঁ, সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন গুণী মানুষ। তিনি একাধারে গায়ক, বাদক, মঞ্চাভিনেতা, নির্মাতা ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী চর দেহুন্দা গ্রামে এক রক্ষণশীল পরিবারে তাঁর জন্ম। গত বুধবার (৩ জুন) সবার অগোচরেই কেটে গেল তার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি। ২০১৪ সালের এই দিনে তিনি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ছোটবেলা থেকেই তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি ওস্তাদ আব্দুর রহিম খোকনের কাছে। স্থানীয় দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন প্রথম নাটকে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তারপর নব্বই দশকে ঢাকা থেকে উদীচীর ব্যানারে গান গেয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি শাণিত হন। দেশবরেণ্য নাট্যজন আলী যাকেরের নেতৃত্বাধীন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগদান করে তার নাট্যচর্চায় যোগ করেন বেগবান মাত্রা। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বহু গুণী মানুষের সান্নিধ্য ও সহযোগিতা পেয়ে আজাদ ধীরে ধীরে যখন নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে তার জীবনে নেমে আসে চিরন্তন মৃত্যুর সূচীভেদ্য অন্ধকার।
এ কে এম আজাদ ছিলেন একাধারে সঙ্গীত শিল্পী ও পরিচালক, তুখোড় মঞ্চাভিনেতা, নির্মাতা ও সুরকার। নাগরিক থিয়েটারের অসংখ্য নাটকের আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে “নীলকণ্ঠ বাউল” ছদ্ম নামে গাইতেন বলে কিশোরগঞ্জের সাংস্কৃতিক জগতের নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিতই রয়ে গেছেন। তার সহধর্মিনী ঝুমু মজুমদারও নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সক্রীয় কর্মী।
আজাদ ২০১৩ সালে গাজী রাকায়েত পরিচালিত “মৃত্তিকা মায়া” ছবির সেরা সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে যৌথভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তাছাড়া তিনি এককভাবে বাচসাস পুরস্কার পেয়ে তার সম্যক কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন সবার বড়। তার কনিষ্ঠ সহোদর আসাদুজ্জামান নিকলী মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার নাট্যকর্মী এ এফ এম আহাদ টিআইবি’র একজন পদস্থ কর্মকর্তা।
তিনি কখনো কর্মের স্বীকৃতির জন্য পুরস্কার পাবার নেশায় কোথাও দৌড়ঝাঁপ করেননি। সম্মান ও পুরস্কারই তার কাছে এসেছে। আমরা কিশোরগঞ্জ জেলার এই গুণী মানুষটির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।