ভূমিদস্যু চক্রের ভয়ে জীবনশঙ্কায় কিশোরগঞ্জের শিক্ষানবিশ আইনজীবী

মো: আল আমিন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জ সদরের মোল্লাপাড়ায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো: শাহ কুতুব হোসাইনীর প্রায় ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে একটি চিহ্নিত ভূমিখেকো সিন্ডিকেট। শহরের ফিসারি রোডের মরহুম হামিদ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে কুতুব হোসাইনী বিষয়টি নিয়ে সদর মডেল থানায় জিডি ও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করলে ভূমিদস্যুরা আরো বেপারোয়া হয়ে ওঠে। ভূমিদস্যুরা এখন প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে হোসাইনী ওই জমিতে গেলে তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে খুন করে ফেলা হবে।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভূমিদস্যুচক্রের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো: শাহ কুতুব হোসাইনী। জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারে মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে ভূমিখেকো চক্রের হাত থেকে জমি রক্ষা এবং তার ও পরিবারের নিরাপত্তা বিধানে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে হোসাইনী বলেন, ২০১৬ সালে সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের বিন্নগাঁও মৌজার মোল্লাপাড়া গ্রামে যু্ব উন্নয়ন অফিসের পাশে ৬০ খতিয়ানের সিএস এসএ ২৭০৭ ও ২৭২২ দাগে তাসলিমা আক্তার নামে একজনের কাছ থেকে মোট সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমি কিনেন তিনি। ভূমিখেকো সিন্ডিকেট বাহিনীর নেতা সদরের মারিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত আলফাজ উদ্দিনের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম বিগত কিছুদিন যাবৎ তার কাছে ওই জমিটি নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তর করতে প্রকাশ্যে ও লোকের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তা না হলে এখান থেকে বিনামূল্যে এক শতাংশ জায়গা অথবা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে এমন শর্ত দেন ভূমিদস্যু নেতা রফিকুল। চাঁদার টাকা না দেয়ায় রফিকুল ও তার বাহিনী এখন হোসাইনীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে মো: শাহ কুতুব হোসাইনী জানান, চার বছর আগের কেনা সাড়ে পাঁচ শতাংশের তার এই জমিটি একেবারেই নিষ্কন্ঠক। এই জমির সিএস-এর মালিক ইন্তাজ শেখ ও ইদ্রিস শেখ নামের দুই ভাই। দুই ভাইয়ের ১ জন করে ছেলে ও ১জন করে মেয়ে। তার জমিটি ইন্তাজ শেখের মেয়ে উমিতুন্নেসার অংশ। উমিতুন্নেসা ১৯৮৩ সালে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এই জমিটি মোল্লাপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদ ওরফে সুরত আলীর কাছে সাফ কাওলায় বিক্রি করেন। সুরত আলী এই জমিটি তার মেয়ে তাছলিমাকে হেবামূলে কাওলা দেন। ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাছলিমার কাছ থেকে এই জমিটি কাওলা রেজিস্ট্রি করেন। জমিটি কেনার পর শাহ কুতুব হোসাইনী জায়গা দখলে নিয়ে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় বাটোয়ারা মোকদ্দমা করে আদালতের মাধ্যমে জমির সীমানা বুঝে পান। এর পর থেকেই জমিটি তিনি ভোগদখল করে আসছেন।

গত ৩ মে ২০০৭ নং দাগের ২ শতাংশ ভূমিতে মাটি ভরাটসহ নির্মাণ কাজ করতে গেলে এলাকার ভূমিখেকো সিন্ডিকেটের নেতা রফিকুলের নেতৃত্বে তার ছোট ভাই শফিকুল, মোল্লাপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি রমজান, মৃত তবিবুরের ছেলে রাসেল, আজিজ ওরফে ছুট্টুর জামাই, হিরা মিয়ার ছেলে খোকন, জুম্মন ওরফে শিবির জুম্মন, শফিকুলের ছেলে এনায়েত, রফিকুলের ছেলে জুবায়ের ও ইসমাইলের ছেলে রাব্বিসহ আরো ৭-৮জন ওই জমি জোর করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। যার মূল্য প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। ওই দিনের পর থেকে ভূমিখেকো চক্রটি প্রায় প্রতিদিনই এই জমিটি জবর-দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সোমবার (২২ জুন) সকালে ওই ভূমিদস্যু চক্রটি জমিটি জবরদখল করতে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভূমিদস্যু প্রধান রফিকুল ইসলাম ও লিসান নামে এক ভূমিদস্যুকে আটক করে আদালতে পাঠালেও আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে যায়। এতে চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এখন প্রকাশ্যে দা লাঠি নিয়ে ঘুরছে হোসাইনীকে মারার জন্য। হুমকি দিয়ে যাচ্ছে হোসাইনীকে জমির আশপাশে পেলে কুপিয়ে বস্তায় ভরে ফেলা হবে। এ পরিস্থিতিতে শাহ হোসাইনী জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখন আমার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। যে কোনো সময় তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে।”

সংবাদ সম্মেলনে শাহ কুতুব হোসাইনী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমি এখন জমি রক্ষা করবো দূরের কথা ভূমিদস্যুদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ভূমিখেকো চক্রটি যেকোনো সময় সন্ত্রাসী কায়দায় ৪ বছর ধরে ভোগদখলীয় নিষ্কণ্ঠক আমার এই জমিটি জবরদখল করতে পারে- এ শংকায় আমার বয়োবৃদ্ধ মা এখন শয্যাশায়ী। পরিবার পরিজন সবাই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আইন আমাকে সুরক্ষা দেবে এটাই আমি আশা করি। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমি গণমাধ্যম মারফত এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

Similar Posts

error: Content is protected !!