মোহাম্মদ কবীর হোসেন ।।
সবাই কথার ফুলঝুরিতে ব্যস্ত। হাওরের অসহায় মানুষ গুলোর আর্তচিৎকার আর হাহাকার কারো কানে পৌছায়নি। কখনোই তাদের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন হয়নি আর হবেও না। নানা দিক দিয়ে এ বিশেষ অঞ্চলের সহজ সরল মানুষগুলো অনগ্রসর, পশ্চাৎপদ, বৈষম্য ও বঞ্চনা শিকার। তাদের নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই, কথা বলারও কেউ নেই। জন প্রতিনিধি যাঁরা তাঁদেরও দায় সারা ভাব।ভোটের সময় একটু কদর বাড়লেও ভোট গেলে- যেই লাউ, সেই কঁদু। কোথায় গেলে তাদের অন্তহীন সমস্যার সমাধান হবে তা তারা ভেবেই ক্লান্ত। প্রতিনিয়ত তারা সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতি বছর অকালবন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা, শীলা বৃষ্টিতে ফলসহানি ঘটে। হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে ফ্যাল ফ্যাল চাহনিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
একবার ফসলহানি ঘটলে তা কেটে উঠতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। বর্ষায় আফালের কারনে আছে বাড়ী ভাঙ্গন। বাড়ী রক্ষা করতে দিন-রাত পানিতে কাটাতে হয়। রয়েছে ঝুঁকিপূর্ন যাতায়াত। অসংখ্য প্রানহানী ঘটে বর্ষায়। দুর্গম ও অপ্রলিত যাতায়াত ব্যবস্থার কারনে, জরুরী রোগীকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার অভিপ্রায়ে রওয়ানা হলে পথিমধ্যেই রোগী পরপারে পাড়ি জমান। বর্ষাকালে জেলেরা স্বাচ্ছন্দে মুক্ত পানিতে মাছ ধরতে পারেনা। নদী বিলের ইজারাদারগন ও পুলিশ মিলে নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে। অভূক্ত আর মার খেতে খেতে তাদের দেহ হয়ে গেছে জীর্ণ শীর্ণ। গালার কন্ঠ হয়ে গেছে ক্ষীন। তাই তাদের আওয়াজ বেশী দূর পৌঁছায়নি। অথচ সরকার হাওরাঞ্চলের নদী বিল থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করছে। শধু এ টাকাটা ব্যয় করলেই হাওরের মানুষের ভগ্যের চাকা ঘোরে যেত।
গত বর্ষায় “হাওর অভিযাত্রা” নামে ঢাকাস্থ হাওরের কিছুসংখ্যক কৃতি মুখ সফরে এসেছিল। হাওরের মানুষজন প্রচন্ড উচ্ছাস ও আবেগ নিয়ে তাদের কাছে মনের কথাগুলো বলার চেষ্ঠাও করেছে। আমাদেরই কৃতি সন্তানরা তারা বাংলাদেশের প্রাণ কেন্দ্রে থাকেন। আশায় বুক বেধেঁছিল কথাগুলো রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারনী মহলে বলার চেষ্টা করবেন। কিন্ত কেউ কথা রাখেনি। অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়। হাওরের মানুষগুলো প্রতি যদি তাদের মমত্ববোধই থাকতো তাহলে এ দুর্দিন, দুর্বিপাকে, অন্তত তারা এলাকা পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষের নিকট সমস্যা গুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারতেন। উপর মহলে আলোচনা করতে পারতেন। হাওরের মানুষের ফসলহানির বিষয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে হলেও মানব বন্ধন করতে পারতেন। তাঁরাতো ঢাকাতেই থাকেন। ভাড়া দিয়ে রাজধানীতে আসতে হবেনা। মানুষকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখানো উচিত নয়। মিথ্যে বলে হাসানোর চেয়ে সত্য বলে কাঁদানো আনেক শ্রেয়।
অনেকেই আছেন হাওর নিয়ে অতিউৎসাহ দেখান। কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই। শুধু খাতা কলমে থাকলে হবে না। বক্তিতা বিবৃতি সর্বস্ব ভালবাসা কোনটা তা মানুষের উপলব্ধিতে আছে। হাওরবাসী কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায়। হাওর শব্দটা যেন একটি অবলা বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এবারের দুঃসময়ে যদি হাওরবাসী সান্তনা দেবার মতো কিছু লোক পেলে অত্যন্ত খুশী হতেন। কৃতজ্ঞতা ভরে তাদের স্মরণ করতেন। কৃত্তিম ভালবাসা নয়, কথার ফুলঝুরিও নয়, আন্তরিক ভাবে কাজ করে হাওরের মানুষের সমস্যা গুলোকে জয় করতে হবে। আর জেগে উঠতে হবে হাওরের সন্তানদেরকেই।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, আব্দুল জব্বার রাবেয়া খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খালিয়াজুরী, নেত্রকোনা।