তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নিকলীর হাওর

মু হেলাল উদ্দিন ।।

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল নিকলী উপজেলা। এখানকার মানুষের প্রধান অর্থকরি ফসল বোরো ধান। বছরে তাদের একটিমাত্র ফসল বোরো। কৃষকের ঘাম ঝরানো সে ফসলের মাঠ এখন পানির নিচে। ভারী বর্ষণ ও উত্তর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিকলীর ডুবি, খাসিপুর, গোরাদিঘা, বরাটিয়া, হংরাইল, সিংপুর এলাকার হাওড়গুলোর নদীর চর, বিলের পাড়, হাইল ক্ষেত (নিচু) জমির ২৮ ব্রি ও ২৯ ব্রি জাতের ধান পানির নিচে।

অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ১শ’ ২৫ হেক্টর জমি পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সব জমিতে প্রায় ৬শ’ ২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। যার বাজার মূল্যে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে ডুবি মৌজার খয়ের কান্দার হাওর রক্ষা বাঁধ এবং সিংপুর হাওরের বড় বাঁধ। যদি এ দুটি বাঁধ ভেংগে যায় তবে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি সাধন হবে। আর চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হবে এলাকার কৃষক পরিবারগুলো।

পানিতে প্লাবিত হাওরে পরিদর্শনে গেলে এ নিয়ে কথা ডুবি গ্রামের কৃষক ও মাদ্রাসার শিক্ষক আজিজুর রহমান, একই গ্রামের কৃষক ইলাল মিয়া, সিংপুর গ্রামের কাউসার আহম্মেদ, সাহেদ আলী, খাশিপুর গ্রামের আলামিন, ভাটিবরাটিয়া গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ও জসিম উদ্দিন, হংরাইলের মর্তুজ আলী, কালাচান, সুরুজ আলী, সুরাফ মিয়া, মস্তুফা কামাল, মানিক মিয়া, হানিফ মিয়া, গোরাদিঘার রমজান আলী, সুরত আলী, ময়মন্নেছা। এদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে এ প্রাকৃতিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এ এলাকার কৃষকদের। তারা আরো জানান, গেল বছরের চিত্র এবং এ বছরের অবস্থা একই।

বর্গাচাষী মতিন বলেন, আমি মহাজনের কাছ থেকে লগ্নী করে জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেছিলাম। কিভাবে দেনা পরিশোধ করব? হাওরবাসী মানুষের বোরো ধানের ওপর নির্ভর করে তাদের এক বছরের সাংসারিক যাবতীয় খরচ । এলাকাবাসী সরকারের কাছে দাবি জানান, হাওর রক্ষা বাঁধগুলোতে সরকারি অর্থায়নে স্লুইচ গেট নির্মাণ করে তাদের প্রাণের বোরো ফসল রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমনিভাবে প্রতিবছর ফসলের ক্ষতি হওয়ায়। অনেক কৃষক পরিবার হারিয়েছে তাদের গোয়ালভরা ঘরু, গোলাভরা ধান, মহাজন ও ব্যাংক লগ্নী দিতে দিতে এখন তারা শ্রমিক। ইতিমধ্যে হাওর পরিদর্শনে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, এনজিও ব্যক্তিত্ব।

সোমবার ৩ এপ্রিল হাওরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম। সাথে আরো ছিলেন, সিংপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আছমা জাহান। অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্যোগ নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি জরিপ করে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।

Similar Posts

error: Content is protected !!