শুক্র-শনিবারের অতিবর্ষণে ভেঙে গেছে হাওরের শেষ বাঁধটিও

প্রকৃতির বৈরিতার কাছে অবশেষে হার মানলেন কৃষক। ঢলের পানি বৃদ্ধি এবং দু’দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বাঁধটি ভেঙে গেছে। এটি রক্ষার জন্য কৃষকরা রাত-দিন পরিশ্রম করে আসছিলেন। তবু শেষ রক্ষা হলো না। ফলে আরও ৬ হাজার একরের বোরো ধান পানিতে গেল। শুক্রবার ও শনিবারের বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে গিয়ে এই সর্বনাশ হলো। ভেঙে গেল তাদের শেষ স্বপ্নটুকুও।

এদিকে অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানি আঘাত হানছে উজান (উঁচু) এলাকায়। ফলে ওই এলাকার কৃষকদের মধ্যেও সব হারানোর আশঙ্কা বিরাজ করছে।

গত দু’দিনের বর্ষণে জেলার হোসেনপুর, সদর ও নান্দাইল উপজেলার সীমানা নিয়ে সবচেয়ে বড় বিল ‘পানান বিলে’ পানি ঢুকে আধাপাকা বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। ওই বিলে প্রায় ১০ হাজার একর বোরো জমি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার একর বোরো ধান শনিবার ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তলিয়ে গেছে।

এলাকার কৃষক আবদুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, তাদের জীবদ্দশায় এমন আগাম বন্যা পানান বিল এলাকায় কখনও হয়নি। আইনজীবী মো. শাহ্জাহান জানান, অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানি এবার উজান এলাকায় ঢুকে পড়ায় বাকি ফসল রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে পানান বিল এলাকায় এমন বিপর্যয় দেখেননি।

তাড়াইল উপজেলার অনেকটা উঁচু এলাকা দামিহা ও দিগদাইর ইউনিয়নে হাওরের পানি ঢুকে পড়েছে। দু’দিনের বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কাওড়ারবন বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে আরও ৬ হাজার একরের বোরো ধান। জানা গেছে, আগাম বন্যায় অনেকটা নিরাপদ ছিল বাজিতপুরের হুমাইপুর হাওরের ফসল। কিন্তু তাও জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। পানি ছুঁই ছুঁই করছে ধানগাছের ডগায়।

চৈত্রের বন্যায় কিশোরগঞ্জে হাওরের সিংহভাগ ফসলই ডুবে যায়। বাকি ৩০ শতাংশ ফসল বাঁচাতে কৃষক সর্বশক্তি নিয়োগ করেন বাঁধ রক্ষায়। কিন্তু গত দু’দিনে তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় উপচেপড়া পানি।

ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মশিউর রহমান খান সমকালকে জানান, কৃষকরা এ পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ জমির কাঁচাপাকা ধান কেটে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

মিঠামইনের ইউএনও তাসলিমা আহমেদ পলি বলেন, মিঠামইন উপজেলায় মোট ৬১ শতাংশ জমির ফসল চৈত্রের বন্যায় তলিয়ে গেছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের সাঈদ জানান, গত দু’দিনে অষ্টগ্রামে গাঙিনার বাঁধ, পাতিদিয়ার বাঁধ, বিল মাসা বাঁধ, নাগরখালী বাঁধ ও কলমা বাঁধ ভেঙে গিয়ে প্রায় ছয় হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তিনি সরেজমিনে পাকা ধানগুলো নষ্ট হতে দেখে কৃষককে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাননি বলে জানান।

ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও তাড়াইলের কৃষকরা জানান, দু’দিনে জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও তাড়াইল হাওরের কমপক্ষে ১০ হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দাবি ৫ হাজার একর জমি তলিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, চৈত্রের বন্যায় ও পাহাড়ি ঢলসহ এ পর্যন্ত জেলার হাওর এলাকায় এক লাখ ১৯ হাজার ৪৪৩ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তা ছাড়া উজান এলাকায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। তাই উজান এলাকায় ক্ষতির পরিমাণের হিসাব এখনও আসেনি। দুই-এক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। কৃষি বিভাগের হিসেবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন কৃষক সমাজ, জনপ্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, সারা জেলার মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ দেড় লাখ একর ছাড়িয়ে যাবে।

সূত্র : ভেঙে গেল কৃষকের শেষ স্বপ্নটুকুও (সমকাল)
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কিশোরগঞ্জ অফিস

Similar Posts

error: Content is protected !!