সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কিশোরগঞ্জ ।।
কিশোরগঞ্জের সাথে রাজধানী ঢাকার রেল যোগাযোগের মাধ্যম আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি প্রত্যাহার করায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন সাত শতাধিক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে ১৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। সম্প্রতি সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা বৃদ্ধিতে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং ট্রেনের বগি কমিয়ে দেয়ায় যাত্রীদের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে; কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় জেলাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন ও যাত্রী সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এবং বিকেলে চলাচলকারী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিতে গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শোভন শ্রেণির একটি করে দুটি বগি প্রত্যাহার করে নেয়। এতে করে এগারসিন্দুরের ৭০টি এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭০টি সিট কমে যাওয়ায় যাত্রীরা প্রতিদিন শোভন শ্রেণির টিকিট পাচ্ছেন না। শনিবার (২০ মে ২০১৭) স্টেশনে টিকিট নিতে আসা যাত্রীরা অভিযোগ করেন, রেল কর্মচারীদের যোগসাজশে নির্ধারিত টিকিটের দুই-তৃতীয়াংশই কালোবাজারে চলে যায়। এতে যাত্রীরা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের কালোবাজারিদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে টিকিট কিনতে হচ্ছে।
এগারসিন্দুর-প্রভাতী ও এগারসিন্দুর-গোধূলি সপ্তাহে ছয় দিন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে চলাচল করে। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন বিকেলে ঢাকা-কিশোরগঞ্জের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। দুটি ট্রেনে যাত্রীসেবা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও বিকল্প কোনো ট্রেন না থাকায় প্রতিদিন সাত শতাধিক যাত্রী স্ট্যান্ডিং টিকিট করে এগারসিন্দুর ও এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সূত্র মতে, দুটি ট্রেনের শোভন শ্রেণির ১৪০টি টিকিট কমে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শনিবার কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেয়ে অনেককেই ফিরে যেতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ একটু আড়ালে গিয়ে কালোবাজারির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন ঢাকা যাওয়ার টিকিট। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ট্রেনের যাত্রী হয়ে ঢাকায় ব্যবসার কাজে যাচ্ছেন এরশাদুল হক। তিনি বলেন, বগি প্রত্যাহার করায় নিয়মিত ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি বহুগুণ বেড়েছে। শিক্ষার্থী আতিকুল সারোয়ার শুক্রবার খোঁজ নিয়েও টিকিট পাননি। শনিবার শেষ মুহূর্তে শোভন চেয়ার শ্রেণির ১৫০ টাকার টিকিট ২১০ টাকা দিয়ে জোগাড় করে ঢাকায় যান।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ট্রেন দুটির বগি প্রত্যাহার করে নেয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কারণ শোভন চেয়ারে মোট ১৪০টি সিট কমে গেছে। সিট না থাকায় যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
স্টেশন মাস্টার আরও জানান, ট্রেন দুটিতে চারটি করে বগি সংযোজন একান্ত জরুরি। তা না করে একটি করে বগি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যাত্রীদের অবস্থা দেখে খারাপ লাগে, তবে আমাদের কিছু করার নেই।
সূত্র : ১৭০ কিমি দাঁড়িয়ে যান সাত শতাধিক যাত্রী (সমকাল, ২২ মে ২০১৭)