আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তা থেকেই দলটি সংসদীয় আসনগুলোতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ৩০০ আসনের প্রতিটিতে তিনজন করে খসড়া প্রার্থী তালিকা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে। অনেক আসনে তিনজনের অধিক প্রার্থীর নামও রয়েছে। এই নয় শতাধিক প্রার্থীর তালিকা থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য তিনশ’ প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির বার্তা নিয়ে সারাদেশে বিএনপির ৫১টি সাংগঠনিক টিম সভা করেছে। ওই ৫১টি টিমের প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ৩০০ আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তবে এজন্য একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ থাকতে হবে। নির্বাচনের মাঠ সমতল হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ছাড় না দিলে বিএনপি কি করবে সে পরিকল্পনাও তৈরি আছে।
কেন্দ্রের এই নির্বাচনমুখী তৎপরতার কারণে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সরব হচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি আসনেও আগাম নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দূর্গ নামে পরিচিত বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীগণ জেলার ছয়টি আসনেই জয়লাভ করেন। এছাড়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ জেলার বাসিন্দা হওয়ায় কিশোরগঞ্জের প্রতি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সবারই আলাদা দৃষ্টি থাকে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টির মধ্যে পাঁচটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীগণ নির্বাচিত হন। জেলার একমাত্র আসন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইলে) এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের এ দূর্গের নির্বাচনী অঙ্ক পাল্টে দিতে আগামী নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কোমর বেঁধে মাঠে নামছে। স্ব স্ব আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতারা ইতিমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, দলের সমর্থন পেতে লবিং ছাড়াও মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ করছেন তারা।
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর)
বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারদলীয় জোট প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাসুদ হিলালী। ভিভিআইপি প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সামনে রেখেই আগামী নির্বাচনের জন্য তৎপরতা এবং ঘর গুছাতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সরকারের বিগত সময়কালের সাফল্য ও স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার চেষ্টা করছে দলটি। অন্যদিকে কোন্দলে জর্জরিত বিএনপিতে চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঁড়ঝাঁপ। দলটির হয়ে এরই মাঝে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন মনোনয়নযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়েই মূলত স্থানীয়দের মাঝে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ, জল্পনা-কল্পনা। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিগত নির্বাচনে দলটির প্রার্থী সাবেক এমপি মো. মাসুদ হিলালী, সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউলাহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব ইসরাইল মিয়া প্রমুখের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া)
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ২০০১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলটির প্রার্থী ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া, পাকুন্দিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল, জেলা বিএনপি নেতা শহীদুজ্জামান কাকন প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জনও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল)
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মহজোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারদলীয় জোট প্রার্থী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠার পর থেকে তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না। এ পরিস্থিতিতে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা-ই হয়ে ওঠতে পারেন এ আসনে বিএনপির ভরসা।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম)
২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারদলীয় জোট প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবার পর তার শূণ্য আসনে গত ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তার বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক পুনরায় নির্বাচিত হন। সে হিসাবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের আগাম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান ছাড়াও এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন বিগত উপ-নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম এবং ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চনের ছেলে ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী)
এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি মো. আফজাল হোসেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ সালেহুজ্জামান খান রুনু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এহেসান কুফিয়া, অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন বাদল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শফিকুল আলম রাজন প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর)
এই আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের প্রার্থিতা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
সূত্র : কিশোরগঞ্জের ৬ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী যারা [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ৯ জুলাই ২০১৭]