আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই মেয়েদের কিছু সমস্যা ঘুরে ঘুরে আসে প্রতিমাসেই। তখন শরীর যত না খারাপ থাকে, তার চেয়েও মেজাজ থাকে বেশি খারাপ। সে সময়ে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু ঔষধি গাছের কথা জানিয়েছেন এক জার্মান বিশেষজ্ঞ।
নানা সমস্যা
পিরিয়ড বা মাসিক হওয়ার আগে, পরে, চলাকালীন অবস্থায় এবং পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পরও অনেকের মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, কোমর ব্যথা, পা ব্যথা, বমিভাব, ওজন বাড়া, খিঁচুনি, মেজাজ খারাপ, ঘুমের ব্যঘাত, বার বার টয়লেটে যাওয়া, ত্বকের সমস্যা, নার্ভাসনেস – এ ধরণের নানা সমস্যা হয়ে থাকে, মূলত শরীরের হরমোনজনিত কারণে।
হরতকি বা ‘সেন্ট জন্স ওয়ার্ট’
পিরিয়ডের সময় অনেকেই বিষন্নতায় ভোগেন, যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত। তাই এক চামচ হরতকি বা হরিতকি, জার্মানে যা কিনা ‘ইয়োহানেস ক্রাউট’, ১৫০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে ঢেলে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এই চা সকালে ও রাতে এক-দুই কাপ পান করুন, দেখবেন শরীরকে কেমন ঝরঝরে হয়ে গেছে! এই ঔষধি পাতার তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল এবং রস বাজারে পাওয়া যায়।
পা ব্যথা, খিঁচুনিতে ক্যামেলিয়া
মাসিকের সময় পা দুটোয় কেমন যেন ব্যথার ভাব বা খিঁচুনির মতো লাগে, প্রায় সকলেরই। পরিপাক নালিতেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ১৫০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে তিন চামচ ক্যামেলিয়া ফুল ছেড়ে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ঢেকে রাখুন। এমন ক্যামেলিয়া চা প্রতিদিন তিন-চার কাপ পান করলে খুব আরাম হয়। ক্যামেলিয়ার গুণের কথা অবশ্য অনেকেরই জানা।
নিসিন্দা গাছ বা ‘চেইস্ট ট্রি’
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সময় কেমন যেন এক অস্থিরতা কাজ করে শরীর, স্তনে ও মনে। এ থেকে মুক্তি পেতে সেবন করুন নিসিন্দা গাছের নির্যাস থেকে তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল বা ড্রপ। জার্মান ভাষায় একে বলে ‘ম্যোন্শফেফার’। তবে এটি কমপক্ষে তিন মাস নিয়মিত খেতে হবে। তবে যাঁদের সবসময়ই অনিয়মিত পিরিয়ড হয়, তাঁদের স্ত্রী বিশেষজ্ঞকে দেখানোই শ্রেয়।
মেনোপজে সালবাই বা ‘সেইজ’
যাঁদের বয়স ৩৫ বা তার বেশি, তাঁদের মেয়েলি সমস্যা বা মেনোপজ-এর সময় সালবাই পাতা বেশ উপকারী। সালবাই বা সেইজ পাতা, বাংলাদেশে যা বাবুই তুলসী বলে পরিচিত, অন্যান্য চায়ের মতোই ফুটন্ত পানিতে একটু বেশিক্ষণ, অর্থাৎ দশ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন তিন থেকে চার কাপ পান করুন। এমনটা করলে উপকার হবেই, জানান ডা. ইয়োর্গ গ্রুনভাল্ড।
সয়াবিন বা সয়ার বিচি
মাসিক বা মেনোপজ-এর সমস্যায় সয়াবিন, সয়ার বিচি, বিভিন্ন ধরণের ডাল খুবই উপকারী। এশিয়ার দেশগুলোতে মুগের ডাল বা অন্যান্য ডালের বিচি নিয়মিত খাওয়া হয় বলে এশীয় নারীদের এ ধরণের সমস্যা ইউরোপীয় বা অ্যামেরিকানদের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে। তাছাড়া ডালে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। তাই ডাল সকলের জন্যই উপকারী।
আয়ত্বে রাখুন
মাসিকের আগে, পরে বা চলাকালীন মেয়েরা কিছুটা সচেতন থাকলে শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখা সম্ভব। এর মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটা বড় শর্ত। এছাড়া পিরিয়ড প্রতিমাসে হবেই। তাই মাসিকের কথা ভুলে গিয়ে মনকে নিজের আয়ত্বে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এ কথা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. ইয়োর্গ গ্রুনভাল্ড।
সূত্র : মেয়েদের গোপন সমস্যায় ঔষধি গাছ [ডয়চে ভেলে, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫]