কটিয়াদীতে কমরেড অজয় রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত


কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।

বাংলাদেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদবিরোধী মঞ্চের সমন্বয়ক এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি কমরেড অজয় রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ১৭ অক্টোবর বিকালে কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে কমরেড অজয় রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। কটিয়াদী উপজেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত সভায় উপজেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি মোঃ খুর্শিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পংকজ ভট্টাচার্য্য।

অতিথিগণ অজয় রায়ের কর্মজীবন এবং স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ড. নূহ-উল-আলম লেলিন, কটিয়াদী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী হিলাল উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক ট্রাস্টি মনিসিংহ- ফরহাদ ট্রাস্ট, মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান ননী ট্রাস্টি মনিসিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট, অজয় রায়ের স্ত্রী জয়ন্তী রায়, কিশোরগঞ্জ জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট অশোক সরকার, বনগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিলন, মাস্টার আমির উদ্দিন, উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বেণী মাধব ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অজয় রায় ১৯২৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামে। অজয় রায়ের পিতা প্রমথ নাথ রায় বারানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ছিলেন। মায়ের নাম কল্যাণী রায়। ১৯৪৩ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন এবং ১৯৪৫ সালে বারানসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। সেখানেই তিনি ফার্মেসি বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। তিনি স্কুলে থাকা অবস্থায়ই ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৭ সালে তিনি কারাগারে বসেই অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-এর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। এছাড়া বিভিন্ন সময় সিপিবি’র সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন।

অজয় রায় ১৯৯৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে ‘কমিউনিস্ট কেন্দ্র’ গঠন করেন। পাকিস্তান শাসনামলে তিনি ১৫ বছর জেল খেটেছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি ১৪টি বইয়ের লেখক এবং জাতীয় দৈনিকগুলোতে কলাম লিখতেন নিয়মিত। স্ত্রী জয়ন্তী রায়, ২ মেয়ে, ১ ছেলে যুক্তরাজ্যের সুইজারল্যান্ডে বাস করেন।

কমরেড অজয় রায় ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর আগে, বাংলার মাটিতে মিশে যাওয়ার আক্ষেপ পোষণ করেছিলেন। এজন্য তাঁকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামের পৈতৃক ভিটায় সমাহিত করা হয়।

Similar Posts

error: Content is protected !!