খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
একদিকে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ফসল। ভর বর্ষায়ও নেই পানির দেখা। বর্ষানির্ভর জীবিকা বন্ধ। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হাওরাঞ্চল। দুর্যোগ কবলিত এলাকা ঘোষণা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্ষার এক-চতুর্থাংশ সময় অতিবাহিত হলেও হাওরে দেখা নেই পানির। যে সময়ে উত্তাল ঢেউ থাকার কথা, সেই সময়ে অশনি সংকেতের মতো আধডুবা হাওরাঞ্চল। দেশের অন্যতম আমিষ চাহিদার মিঠা পানির মাছের দেখা নেই। বেকার মৎসজীবী সম্প্রদায়। বিপর্যস্ত যোগাযোগ অবকাঠামো।
গ্রামগুলোর সংযুক্ত মৌসুমী সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী। ক্ষণে স্থলবাহন, ক্ষণে জলবাহনে হাওরবাসির ভোগান্তির শেষ নেই। দ্বিগুণেরও বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে। জরুরি রোগী পরিবহন প্রায় অসম্ভব। যোগাযোগ সমস্যার কারণে পণ্য বিতরণকারী, ফেরিওয়ালাসহ নিত্যপণের সকল ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছে। গ্রামবাসিরাও ভুগছে খাদ্য বিড়ম্বনায়।
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলী সদরের জেলে পল্লী ভবানীপুরে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে বাঁধা রয়েছে মাছ শিকারের নৌকাবহর। ঘাটপাড়ে স্তুপাকারে রাখা জালের উপর বসে বিমর্ষ জেলের দল। কয়েকজন জাল মেরামত করছেন। কর্ম চাঞ্চল্যহীন। কাছেই খাবারের জন্যে চিৎকার করে কাঁদছে দু’টি জেলে শিশু। সবার চোখে-মুখে দৈন্যতার ছাপ।
জালের উপর বসেই তাদের সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তরুণি বর্মণ, দুলাল বর্মণ, আপন বর্মণ ও বুধু বর্মণসহ উপস্থিতিরা জানান, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতেই জাল-নৌকা সাজিয়ে বসে আছি। হাওরে পানি নাই। জাল ফেলবার উপায়ও নাই। তারা আরো জানান, কেউ এনজিও, কেউ দাদন ঋণের টাকা নিয়েছি। আয়-রোজগার না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। ঋণের কিস্তির চাপ গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
গোরাদিঘা গ্রামের কৃষক ও মৎসজীবি নেতা মানিক মিয়া জানান, আগের বছর আগাম বন্যায়, এ বছর শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক কৃষক জমি পর্যন্ত কাটিনি। শেষ ভরসা ছিলো মাছ মারা। সেই আশাও বৃথা। ভাবছি শহরে চলে যাবো। বিকল্প কাজ জানা না থাকায় তাতেও সাহস পাচ্ছি না।
ধান ব্যবসায়ী আকবর আলী জানালেন, মূল নৌকা ঘাটে ভিড়ে না। রাখতে হয় নদীতে। পরিবহন পরতায় মিলে না। বেকার। জেলে আন্দোলনের নেতা বাসদ কর্মী সাজেদুল হক সেলিম পানিশূন্য বর্ষাকে হাওরাঞ্চলের দুর্যোগ বলে দাবি করেন। দুর্যোগ কবলিত এলাকা ঘোষণা করে সরকারের জেলে ও শ্রমিকদের দ্রুত ত্রাণ ব্যবস্থার দাবি তার। নয়তো খাদ্য সংকট মহামারিতে রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন।
নিকলী উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, এ উপজেলায় ৭ হাজার কার্ডধারী মৎসজীবি রয়েছেন। ভর বর্ষায়ও পানি না থাকায় অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চল। মৎসজীবিদের দূরবস্থার বিষয়টি এবং এদের জন্য কিছু করা যায় কি না তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, হাওরের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা লেখালেখি চালাচ্ছি। আশা করি উর্ধ্বতন মহল দৃষ্টি দিবেন। শীঘ্রই ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টিও মাথায় রয়েছে।