নিকলী সদরের নতুন সমস্যা “পানিবন্দী”

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে প্রায় ছয় মাস যাবৎ উপজেলা পোস্ট অফিস ও কৃষি ব্যাংক শাখাটি পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠান দু’টিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতা ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, নিকলী উপজেলা সদরের পুকুরপাড়, বড়হাটি, কামারহাটিসহ তিনটিরও বেশি গ্রামের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতো কামারের তালাব নামের পুকুরটিতে। যা উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থিত। পুকুরটির পশ্চিম পাড়ের সড়ক পাশে উপজেলা পোস্ট অফিস ও কৃষি ব্যাংকের নিকলী শাখাটি। এই সড়কটি উপজেলা সদরের পশ্চিম অংশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের পথও।

পশ্চিম গ্রামের পুকুরপাড় জামে মসজিদের বেশিরভাগ মুসল্লিও এই সড়কটিই ব্যবহার করেন। প্রায় এক বছর আগে মালিকপক্ষ পুকুরটি ভরাট করে ফেলেন। এতে পোস্ট অফিস ও ব্যাংকটিতে যাতায়াতে সড়কটির চারপাশ উঁচু হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ময়লা পানি জমে তলিয়ে যায়। নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দেখা দেয় দীর্ঘ পানিবন্দীত্ব।

গত ছয় মাস ধরে চলছে এই জলাবদ্ধতা। বর্ষা বা অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলা ভূমি অফিসসহ থানা, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ও নিকলী পুরান বাজারের সাথে সম্পৃক্ত প্রধান সড়ক উপচে যাচ্ছে পানি। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে প্রধান সড়কটিতেও মারাত্মক ধ্বস নেমেছে। ঘুরপথে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করতে অতিরিক্ত সময় ও ঝুঁকি বেড়েছে।

নিকলী শহীদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাজরা মোমেন প্রভা জানায়, এই রাস্তাটি দিয়ে স্কুলে যেতে কাঁদা আর ময়লা পানিতে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। ঘুরপথে সময় ও বেশিপথ হেঁটে স্কুলে যাই।

মুসল্লিদের অভিযোগ, ময়লা পানি মাড়িয়ে অনেকেই নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করতে পারছেন না। কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক আ. জলিল বলেন, ব্যাংক ও পোস্ট অফিস দু’টি দ্বীপ এলাকায় পরিণত হয়েছে। ময়লার ভাগাড় মাড়িয়ে কাজ করতে হয়। বয়স্কভাতা প্রাপ্ত অনেক মুমূর্ষ ব্যক্তি হামাগুঁড়ি দিয়ে ব্যাংকটির সেবা নিতে হচ্ছে। ময়লা পানিতে সর্বাঙ্গ কাদাজলে একাকার এই অসহায়দের দেখে মায়া লাগে।

তিনি আরও বলেন, যে সব সেবার বেসরকারি বিকল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বেশি খরচ হলেও এই কাঁদাজলের ভয়ে মানুষ সেদিকেই ঝুঁকছে এখন।

নিকলী উপজেলা পোস্টমাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. নুরুজ্জামান ভূইয়া জানান, নিত্য কাঁদাজল পেরিয়ে অফিস যেতে-আসতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে। এখন ১০ ফুট রাস্তা রিকশায় চড়ে কোনো রকমে অফিসের সীমানায় পৌঁছি। নিত্য গ্রাহকদের কথা শুনতে হচ্ছে।

কৃষি ব্যাংকটির নিকলী শাখা ব্যবস্থাপক মো. সাদিকুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলছে। আমরা উর্ধ্বতনকেও জানিয়েছি। ভবন মালিক পক্ষকেও বলছি। শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান না হলে আমরা অন্য ভবন দেখবো।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। রাস্তাটির পাশে নালা তৈরির জায়গা নেই। মালিক পক্ষও জায়গা ছাড়ছেন না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!