বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কবি মহিবুর রহিম। ভাটি অঞ্চলের জল ও কাদা মাটিতে বেড়ে ওঠা এই কবি ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি কিশোরগন্জের নিকলী উপজেলার হাওর ও ঘোড়াউত্রা নদীবিধৌত ছাতিরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুলের সীমানা পেরিয়ে সর্বশেষ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বই ছিল তার নিত্যসঙ্গী। মূলত বইপড়ার আন্দোলনে যুক্ত হয়েই লেখালেখির অভ্যাস। ছাত্রজীবনেই তাঁর লেখার প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর লেখা কবিতা, ছড়া প্রকাশ পেতে থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। মহিবুর রহিম নব্বই দশকের একজন শক্তিমান কবি। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে সময় থেকে লেখালেখির জগতে বিখ্যাত লেখক গবেষকদের সান্নিধ্য লাভ করেন। এ যাবত তাঁর মোট আটটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “অতিরিক্ত চোখ” (২০০২), “হে অন্ধ তামস” (২০০৩), “অনাবাদি কবিতা” (২০০৪), “দুঃখগুলি অনাদির বীজপুত্র” (২০১০), “হৃদয়ে আমার কোনো মন্দা নেই” (২০১৫), “যেখানে জলের দুঃখ শস্যের স্বপ্ন একসাথে সংসার গড়ে” (২০১৯), শিশুদের জন্য ছড়াকাব্য “সবুজ শ্যামল মন” (২০১৫), “শিমুল রোদে রঙ্গিন দিন” (২০১৫), “নরসুন্দা নদীর দেশে” (২০১৯) প্রভৃতি।
মৌলিক সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি লোকসাহিত্যের গবেষণায় রত আছেন। কিশোরগন্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এলাকার লোকসংগীত, ভাটিবাংলার হাওরের লোকসাহিত্য বিষয়ে গবেষণা করছেন। বাংলা একাডেমীর অধীন লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ কর্মসূচির আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লোকসাহিত্য বিষয়ে কাজ করছেন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন প্রকাশ করেছে তার “ভাটি বাংলার লোকভাষা ও লোকসাহিত্য ২০১৯”। তিনি লোকসাহিত্যের কাজের জন্য “প্রজ্ঞা শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পদক” ও “স্মৃতি ৫২” সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবিতায় সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে রকি সাহিত্য পদক, ২০১৩ সালে মেঠোপথ সাহিত্য পদক, ২০১৪ সালে লাভ করেন শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক সম্মাননা এবং সুকুমার রায় সাহিত্য পদক ও সম্মাননা ২০১৮। তাঁর কবিতায় দেশপ্রেম, গ্রামীণ নিসর্গ, দ্রোহ, প্রেম সবই এঁকেছেন খাঁটি শিল্পীর মতো। দেশে দেশে যুদ্ধ, হত্যা, সহিংসতার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিবাদ করেছেন পূর্বসূরী কবি নজরুলের মতোই।
তাঁর কাব্য প্রতিভা ও কবিতার প্রশংসা করেছেন বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। কবি আল মাহমুদ তাঁর কবিতার বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, “সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়জন কবির কবিতা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে মহিবুর রহিম তাদের একজন। কবিতা লেখার জন্যে কবিদের যে স্বতন্ত্র অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন মহিবুর রহিমের তা রয়েছে। এজন্য তাঁর কবিতা পাঠক হৃদয়কে স্পর্শ করে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে। বিশেষ করে তাঁর শব্দ ব্যবহারের প্রতি নিষ্ঠা, কল্পনা ও নিজস্ব পদবিন্যাস আমাকে আনন্দিত করেছে। আমার বিশ্বাস, বাংলা সাহিত্যে সে নিজ যোগ্যতায় স্থান করে নিতে পারবে।” অন্য একটি আলোচনায় কবি আল মাহমুদ আরও লিখেছেন “কবি মহিবুর রহিমের ছড়া কবিতার বই পাণ্ডুলিপি আমি শুনলাম, স্পর্শ করে দেখলাম। এই কবির কবিত্বশক্তি দ্রুত সঞ্চারমান। আমার ধারণা কবি মহিবুর রহিম এ কালের ছড়া কবিতায় বিশেষ অবদান রাখবেন। বই প্রকাশিত হলে একজন কবিকে ভালো করে সনাক্ত করা যায়। আমি মহিবুরকে আগে থেকেই চিনি এবং জানি বলেই সাহস করে বলতে পারি, তিনি আমাদের ভবিষ্যতের কবি প্রতিভা। তার রচনা তারুণ্যে উজ্জ্বল, আনন্দে স্বতস্ফূর্ততায় গতিময়। আমি এই কবির সাফল্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকব। আমার ধারণা মহান আল্লাহ তার সাহিত্যের গতিময় তাঁকে নদীর মতো বহমান রাখবেন।”
বর্তমানে পেশাগত কাজে এই কবি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগে কর্মরত শিক্ষক। এর আগে তিনি নিকলী মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ ডিগ্রি কলেজেও কিছুকাল শিক্ষকতা করেছেন। বিগত ২০ বছর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় নিযুক্ত আছেন। বলা চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনি একটা যুগ সৃষ্টি করেছেন। সম্পাদনা, গবেষণা আর মৌলিক লেখালেখিতে সরব এক ব্যক্তিত্ব।
জন্মদিনে নিকলী উপজেলাকেন্দ্রিক প্রথম অনলাইন সংবাদমাধ্যম আমাদের নিকলী ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।