নাড়ি আর নদীর টানেই একদিন ছুটে যাবে : কারার কাউসার

nikli kawsar with soaijoni

যাই যাই করেও আর দেশে ফেরা হচ্ছে না কারার কাউসারের (৪৬)। শেকড়ের টানে প্রতিদিনই ভাবেন, অনেক তো হলো, এবার পাততাড়ি গুটিয়ে দেশে ফিরবেন। নাড়ির টানে দেশে ফেরার ভূতটাও তাড়া দেয়। অস্থির করে তোলে মন-প্রাণকে।

তারপর বাস্তবতার ঢেউ আছড়ে পড়ে জীবনে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব আবেগ। ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিকে হয়ে আসে দেশে ফেরার সব উত্তেজনা-আবেগ।

nikli kawsar with soulmate
সস্ত্রীক কারার কাউসার

কিশোরগঞ্জের নিকলী গ্রামের কারার ইনসাফ উদ্দিনের ছেলে কারার কাউসার (৪৬)। ৮ ভাই ৩ বোনের মধ্যে নবম কারার কাউসার দেশ ছাড়েন ১৯৯৭ সালে। জীবিকার জন্য পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ডে। পরিবার নিয়ে থাকেন জুরিখে। সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে আসা কারার কাউসার প্রথমে কাজ নেন একটি রেস্টুরেন্টে। সেখান থেকে একটি বেকারি হয়ে কাজ নেন ডিম প্রক্রিয়াজাত কারখানায়। সর্বশেষ আউডি কোম্পানির স্টোরে। বর্তমানে কাজ না থাকলেও সমস্যা নেই। সুইচ সরকারের সামাজিক কর্মসূচির অধীনে বেতনের ৮০ শতাংশ ভাতা পান তিনি। যা দিয়ে প্রবাসে বেশ ভালোভাবে চলে যায়।

কাজ না থাকলেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। জুরিখ সিটিতে করছেন কবিতা আবৃত্তি ও উপস্থাপনা। মঞ্চসজ্জা থেকে নাটক সবখানেই থাকেন কারার কাউসার। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নিজের লেখা নাটকে নিজেই করেছেন অভিনয়।

nikli kawsar with soaijoni
মেয়ে সোয়াইজনির সাথে

২০০৯ সালে একই জেলার রুবি আক্তারকে বিয়ে করে জুরিখে নিয়ে আসেন তিনি। এই দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে ছোট্ট কন্যা সোয়াইজনি।

এ তো নদীর নাম, বলতেই কারার বললেন, ঠিকই ধরেছেন। আমার গ্রামের নদীটার নাম সোয়াইজনি। সেই নদীর নামেই রেখেছি কন্যার নাম। প্রতি মূহূর্তে ওকে ডাকার মাধ্যমে আমি স্মরণ করি আমাদের নদীটাকে। স্মরণ করি আমার দেশকে।

মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন কারার কাউসারের। রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখাবেন। বড় হলে শান্তি নিকেতনে পড়াতে পাঠাবেন।

এসব স্বপ্নের মাঝে উঁকি দেয় শঙ্কাও। বলেন, সোয়াইজনির জন্ম এ দেশে। নাড়ির টান যদিও কিশোরগঞ্জে। তবু বেড়ে উঠবে এখানকার সংস্কৃতিতে। তাই বড় হলে দেশের প্রতি কতোটা টান বজায় থাকবে সে চিন্তাও কাজ করে।

nikli kawsar family
এক ফ্রেমে পরিবার

তবে আশাবাদের কথা জানিয়ে বলেন, নাম যেহেতু রেখেছি সোয়াইজনি। তাই বড় হলে সেই নদী দেখার আগ্রহ উঁকি দেবে তার মনে। নাড়ি আর নদীর টানেই সে একদিন ছুটে যাবে সেখানে। আর সেদিনই সার্থক হবে নদীর নামে কন্যার নামকরণ।

এসব কথা বলতে গিয়ে অশ্রুকণার আনাগোনা বাড়তে থাকে চোখে। নিজের অজান্তেই ভিজে ওঠে চোখ। কারার কাউসারের ঝাপসা চোখে যেন ছলকে ওঠে সোয়াইজনির জল!

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

Similar Posts

error: Content is protected !!