সাংবাদিক স্বপনের বাড়িতে গিয়ে দারোগার হুমকি

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের হামলার ছবি ধারণ করায় দৈনিক মানবজমিনের নিকলী প্রতিনিধি ও আমাদের নিকলী ডটকম-এর বিশেষ প্রতিনিধি খাইরুল মোমেন স্বপনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিয়েছেন নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূইয়া। এ সময় ওসির সাথে যাওয়া পুলিশের কয়েক সদস্য সাংবাদিক স্বপনের বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে অশ্লীল গালিগালাজও করেন। শুধু তাই নয়, বাড়িতে না পেয়ে স্বপনকে মোবাইল ফোনে শফিকুল ইসলাম নামে নিকলী থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুদ্রণ অযোগ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং তাঁকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন সাংবাদিক স্বপন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নিকলীতে শুক্রবার সকালে বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল বের করা হয়। বিএনপি কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কার্যালয়ের সামনের বকুলতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ চলাকালে নিকলী থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে গিয়ে বিএনপির ব্যানার কেড়ে নিয়ে নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে। এক পর্যায়ে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া করে সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক মানবজমিনের নিকলী উপজেলা প্রতিনিধি ও আমাদের নিকলী ডটকম-এর বিশেষ প্রতিনিধি খাইরুল মোমেন স্বপন পুলিশের বিভিন্ন অ্যাকশনের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ছবি ধারণের বিষয়টি টের পেয়ে নিকলী থানার ওসি নাসির উদ্দিন ভূইয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিক খাইরুল মোমেন স্বপনের বাড়িতে হানা দেন। এ সময় স্বপনকে বাড়িতে না পেয়ে সেখান থেকে মোবাইল ফোনে স্বপনকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন শফিকুল ইসলাম নামের নিকলী থানার এক এসআই।

সাংবাদিক খাইরুল মোমেন স্বপন জানান, পত্রিকায় খবর পাঠানোর উদ্দেশে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে তিনি উপজেলা সদরের শহিদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় এসআই শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে স্বপনকে বলেন, “আপনি কোথায় আছেন, আপনার কাছে ছবি আছে… একটা ছবি যদি খালি বাইরে যায়… আমি আপনাদের বাড়িতে। ….মারা (মুদ্রণ অযোগ্য ভাষা) খাবেন কিন্তু একবারে।” শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪মিনিটে এসআই শফিকুল ইসলাম তার ০১৭১২-৩৮৯৭৪০ নম্বর থেকে স্বপনের ০১৯১৭-৭২৬১৫১ নম্বরে ফোন করে এসব অশ্রাব্য খিস্তিখেউর আওড়ান।

সাংবাদিক স্বপন এসআই শফিকের এই ফোন কল তাঁর মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন। উপজেলা সদরের বড়হাটি সাহাপাড়া গ্রামে স্বপনের বাড়িতে অবস্থান করে ওই ফোনের পর স্বপনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ডেইজীকেও শাসান নিকলী থানার এই দারোগা। তিনি স্বপনের স্ত্রী ডেইজীকে বলেন, “একটা ছবিও যদি বাইরে গিয়ে থাকে, তবে বুঝবেন। কি বলছি, বুঝছেন?” বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হানা দেয়ায় এবং এসআই শফিকুল ইসলামের এমন রুদ্রমূর্তিতে হতবাক হয়ে যান সাংবাদিক খাইরুল মোমেন স্বপন। পুলিশের হুমকির মুখে এখন অনেকটা আত্মগোপনে রয়েছেন ওই সাংবাদিক।

খাইরুল মোমেন স্বপন বলেন, আমার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ডেইজী ও বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগমকে (৭০) বাড়িতে গিয়ে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে আসে পুলিশের লোকজন। এ সময় আমার মেয়ে ডিঙ্গি (১১) ও পঙখি (৪) আতঙ্কে মা ও দাদিকে জড়িয়ে ধরে। ওসি নাসির উদ্দিন ভূইয়া আমার শাশুড়ি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আক্তারকে ফোন করে বলেন, “একটু আগে পেলে আপনার মেয়ে জামাইকে পিটিয়ে হাড়গুর ভেঙে দিতাম। তাকে সাবধান করে দেবেন।” স্বপন জানান, তাঁর আর্ট স্কুলে গিয়েও তাঁকে খোঁজ করে পুলিশের দলটি।

এ ব্যাপারে এসআই শফিকুল ইসলামের নম্বরে বিকাল পাঁচটায় ফোন করে সাংবাদিককে গালিগালাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি এখন ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

বিষয়টি নিয়ে নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বললে এরকম কোন ঘটনা তার জানা নেই বলে জেলার সাংবাদিকদের তিনি জানান।

পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় সাংবাদিককে হুমকি ও অশ্রাব্য গালাগাল দেয়ার বিষয়টি কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজমুল ইসলামকে অবহিত করলে তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!