চার রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড, একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের মধ্যে চারজনের মৃত্যুদন্ড এবং একজনের আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাসস

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ রায় দেয়। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া ২৩তম রায়।

রায়ে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদসহ চারজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। একজনকে দেয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদন্ড। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্য দু’জন হলেন রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান ও হাফিজ উদ্দিন। আমৃত্যু কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে আসামি রাজাকার আজহারুল ইসলামকে।

nikli shamshuddin
দণ্ডিত শামসুদ্দিন

একই মামলার এ পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন শামসুদ্দিন আহমেদ। বাকি চারজন এখনো পলাতক। গত ১০ ও ১১ এপ্রিল প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে শামসুদ্দিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এডভোকেট মাসুদ রানা এবং পলাতক চারজনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান। এর আগে প্রসকিউশনের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ২৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো সাক্ষী ছিল না। গত ১১ এপ্রিল এ মামলায় উভয়পক্ষে শুনানি শেষে যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছিল।

আজ সকাল ১০টা ৪০মিনিটে ৩৩০ পৃষ্ঠা রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু হয়। রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন অন্য সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। সবশেষে রায়ের মূল অংশ ও দন্ড ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

একই মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন এডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ। আটক আসামি শামসুদ্দিনকে সকাল ৯টার পর কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে তাকে রাখা হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়। পরে রায় ঘোষণার প্রাক্কালে তাকে বিচার কক্ষে আসামির কাঠগড়ায় আনা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাক্ষ্যগ্রমাণ পেশ করা হয়। শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আটক আসামি শামসুদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম মাসুদ রানা। পলাতক অপর চারজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান শুনানিতে অংশ নেন।

এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে কোনো সাক্ষী ছিল না। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গতবছর ১২ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয়া হয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ-
অভিযোগ ১ : ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর ও আয়লা গ্রামের মোট আট জনকে হত্যা ও একজনকে আহত করা।
অভিযোগ ২ : ১৩ নভেম্বর আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনকে হত্যা।
অভিযোগ ৩ : একই উপজেলার মো. আব্দুল গফুরকে অপহরণ করে ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গল ব্রিজে নিয়ে হত্যা।
অভিযোগ ৪ : ২৩ অগাস্ট করিমগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে আতকাপাড়া গ্রামে মো. ফজলুর রহমান মাস্টারকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা।
অভিযোগ ৫ : ৭ সেপ্টেম্বর রামনগর গ্রামের পরেশ চন্দ্র সরকারকে হত্যা।
অভিযোগ ৬ : ২৫ অগাস্ট পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক ও রূপালীকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা।
অভিযোগ ৭ : ১৫ সেপ্টেম্বর আতকাপাড়া গ্রামে আক্রমণ করে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

মামলায় প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর সবাই ছিলেন আসামি। ২ নম্বর অভিযোগে হত্যার ঘটনায় আসামি নাসির, ৫ নম্বর অভিযোগে হত্যার ঘটনায় শামসুদ্দিন, ৬ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা এবং ৭ নম্বর অভিযোগে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মান্নানকে আসামি করা হয়।

Similar Posts

error: Content is protected !!