আজমল আহছান ।।
জীবন চাকা, জীবনের চাকা
ঘুরে উল্টো পথে
কখনও কখনও ……
প্রতিদিনের ন্যায় আজও বাসার (মুগদাপাড়া) পাশের মূল রাস্তা থেকে গাড়ির জন্য অপেক্ষায়। প্রতিদিনই অফিসের গাড়িতে করেই অফিসে আসি ও আবার বাসায় ফিরে যাই। গাড়িতে উঠা এবং নামা দু’টো জায়গাই এক। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। অফিস গুলশান হওয়ায় সেদিকেই যেতে হয়। অফিসের গাড়িতে করেই নিত্যদিনের গুলশানে আসা যাওয়া। শনিবার বাদে প্রতিদিনই যে স্থান থেকে নিয়মিত গাড়িতে উঠি আজ সেখান থেকেই গাড়ি উঠি প্রায় ২৮ মিনিট পরে জ্যামের কারণে।
নিত্যদিনের তুলনায় গাড়ি দেরি হওয়ায় নিজের দিক থেকেই তাড়া ছিল খুব বেশি। আমার যতই তাড়া থাকুক, জ্যামের মাঝে গাড়ি তার নিজস্ব গতিতেই এগুবে। এদিকে আবার অফিসে না দেরি হয়ে যায় সে চিন্তা ছিল পুরোটাই।
সামনের দিকে রাস্তা ফাঁকা আছে দেখছি। কিন্তু তার সামনেও যে ফাঁকা থাকবে তা তো বলা যায় না। আর সে কারণেই ব্যতিক্রমী এই ভ্যানগাড়ি চালক ও ভ্যানগাড়ি দেখার পরও তার কাছে সময় দিতে পারলাম না। আবার এইসব ক্ষেত্রে তাঁরা কোন ধরনের কথাও বলতে চান না। তাতে কি লাভই বা তার সে কথাও ভেবে থাকেন। যারা এমন অবস্থার শিকার তারা কিছু বলতেও চান না। সে ভয়ও ছিল। সবকিছু মিলিয়ে উল্টো পথেই হাঁটতে হল আমাকে।
ব্যস্ততম ও জ্যামপূর্ণ রাস্তায় ভ্যানগাড়ি চালাতে দেখা গেল ৪৫-৫০ বছর বয়সী মহিলাকে। কখনও বেল দিচ্ছেন কখনও হাঁক দিচ্ছেন, ঐ সাইড। ভ্যানগাড়ি, ভ্যানগাড়ি বলে। অনেক কসরত করে ছবি দু’টো মোবাইলে ক্লিক করা। সামনে একটু জ্যাম ও পাশে জায়গা থাকায় আমাদের বাসটি পেছনে পরে যায় এবং ভ্যানগাড়িটি এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে এড়িয়ে বের হয়ে গেল। গাড়িটির সাথে আমাদের দেখা উত্তর বাড্ডা থেকে শাহজাদপুর এর মাঝের রাস্তায়।
তিনি প্যাডেলে পা চালিয়ে যাচ্ছেন। গাড়িতে ৬০ কেজি অর্থ্যাৎ দেড় মণ করে পূর্ণ পাঁচটি বস্তা তিনি তা নিয়ে যাচ্ছেন। মাড়িয়ে যাচ্ছেন জীবনের চাকা পেছনে ফেলছেন অনেক গাড়ি, ভ্যান, রিকশা ইত্যাদি। সামনে আসছে জীবনের আরেকটি সময়। বৃদ্ধকাল। পেছন থেকে গাড়িটি ঠেলছেন একজন পুরুষ। জানি না তিনি কি হোন তাঁর। খুবই কষ্ট হচ্ছে ঠেলতেও। জীবন চালাতে হবে, বাঁচতে হবে। তাই এভাবেই হাল ধরা জীবনের “প্যাডেলে পা চালিয়ে”।
চেষ্টা করেছি কয়েকবার গাড়ি থেকে নামার। কিন্তু যেই নামতে গেলাম তখনই গাড়ি দিচ্ছে টান। আর নামা হয়নি ব্যস্ততায় ও গাড়ি চলার দু’টানায়। অবশেষে সবকিছু পেছনে ফেলে শাহজাদপুর নেমেও গিয়েছিলাম। তাঁর সাথে কথা বলব বলে এগিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার ফিরে আসা ব্যর্থ মনোরথে। কারণ, ততক্ষণে গাড়িটি কোথায় গিয়েছে আর জানা যায়নি। কোন পথ গলিয়ে চলে গেল জানা গেল না। আমারও অফিসে আসতে হবে, তাই আবার অফিসের গাড়িতেই উঠে বসা।
কি ব্যতিক্রম দেখুন এখানে। যার কি না ঘরের কাজে স্বামী, ছেলে-মেয়ে, বউ তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। যে কি না হাল ধরার কথা কঠিনভাবে হলেও পরিবারের। হাল ধরার তরে উপার্জনের জন্য রিকশার প্যাডেল চাপার কথা। সেই মতে ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকার লোকটি পরিবারের সামর্থ্য নিয়ে বাঁচার জন্য রিকশার নয় প্যাডেল চেপে যাচ্ছেন ভ্যান গাড়ীর। এমন আরও অনেক এমন ব্যতিক্রমী চালক আছেন। যাদের দেখার বা তাদের নিয়ে লেখার মত দুঃসাহস বা সামর্থ্যও আমার নেই।
চেষ্টা করলাম একটু কোন একজনের জীবন সংগ্রামের একটি চিত্র তুলে ধরতে।
সালাম তোমায় জননী, সালাম তোমায় ভগ্নী।