শামীম আল মামুন ।।
১৯৮৭ কি ৮৮ সালের দিকে নিকলীর নগর গ্রামের ইস্রাফিল, আলী হোসেন ও মনজিলহাটির নবী হোসেন- এই তিন বন্ধু মিলে প্রথমে নিকলীতে হাঁসের খামারের যে গোড়াপত্তন করেছিল, তা আজ ব্যাপকতা লাভ করেছে। নিকলীতে বর্তমানে ৫ শতকেরও অধিক হাঁসের খামার আছে। বলা হয়ে থাকে যে এক সময় সোনালী আঁশ তথা পাট ব্যবসার মাধ্যমে নিকলী যে সারাদেশব্যপী সুপরিচিত ছিল, এখন সোনালী হাঁস তার স্হান অনেকটাই দখল করেছে। বর্তমানে নিকলী প্রায় প্রতিটি নদীতীরে (ঘোরাউত্রা, ধনু, সোয়াইজনী, নরসুন্দা) একটু পরপর হাঁসের খামারগুলি গড়ে উঠেছে। নিকলীতে মূলত নাগিনী ও খাগী এই দুই ধরনের হাঁস পালন করা হয়। নাগিনী হাঁস নদী থেকেই খাবার সংগ্রহ করে, তাই এই হাঁস পালনের প্রতিই নিকলীর খামারীদের আগ্রহ বেশি। আবার এদের ডিম উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। প্রায় ৩ বছর ডিম পারে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ ডিম উৎপাদন হয়। প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার ডিম বিক্রি হয়ে থাকে। এ এলাকার ডিমগুলো আকারে অন্য এলাকার ডিমের তুলনায় বেশ বড় হওয়ায় কাটতিও বেশি। সুষ্ঠু মার্কেটিংয়ের জন্য উৎপাদনকারীরা অনেকাংশেই অবহেলিত হচ্ছেন।
নিকলীর ডিমগুলি মূলত ঢাকার কাওরানবাজার, ঠাটারিবাজার, চিটাগাং রোড এইসব জায়গায় বিক্রি হয়ে থাকে। এত সম্ভাবনার পরেও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। যেমন- হাঁস মূলত রাণীক্ষেত ও প্লাগ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকা পাওয়া যায় না, পেলেও ৩০ টাকা মূল্যের টিকা প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে খামারিদের কিনতে হয়। আবার পশু ডাক্তার সহজে খামার পরিদর্শন করতে চায় না। পরিদর্শনে এলেও বিভিন্ন পরিমাণে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগও করেন অনেক খামারি।
সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ডিম পাইকাররা যে দাম দেয় তাতেই সব ডিম ছেড়ে দিতে হয়। এর ফলে খামারিরা ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা করা গেলে বাজারে চাহিদা কম থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যাসংকুল সময়ে জমা করে রাখা যেত। বাজারে আবার চাহিদা বাড়লে সুবিধামতো যোগান দেয়া সম্ভব হতো।
লেখক : দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী