আজ কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৯ জুলাই বুধবার। ২০১২ সালের এই দিনে সৃষ্টিশীল ও জনপ্রিয় এই লেখক যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ইন্তেকাল করেন।

দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে নুহাশ পল্লীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রকাশকরা নুহাশ পল্লীতে কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং হুমায়ুন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে’ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাসস

হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকেনা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়েজুর রহমান। একাত্তরে পাকবাহিনী তাকে হত্যা করে। মা আয়েশা ফয়েজ। স্কুল জীবনে হুমায়ুন আহমেদকে পিতার চাকুরীস্থল কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া ও পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধা তালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র জীবনেই তার লেখালেখি শুরু। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শংখনীল কারাগার।’ এই দুটি বই প্রকাশের পর হুমায়ুন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন। সেই থেকে জীবিতকালে তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্মক ও বিজ্ঞানস্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজ ধারাকে প্রাধান্য দেন। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। মানুষের মানচিত্রও উঠে এসেছে। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাকে পথিকৃৎ বলেছেন সমোলোচরা। তিনি উপন্যাস, গল্প, জীবনী, নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কয়েকটি নাটক, কয়েকটি চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ুন আহমেদ গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নুহাশ পল্লী’। এই প্রতিষ্ঠানই ছিল তার সকল কাজের আঙ্গিনা। ২০১০ সালে সরকার হুমায়ুন আহমেদকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করে।

হুমায়ুন আহমেদের ১১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ। এই সংস্থার স্বত্তাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বাসসকে বলেন, হুমায়ুন আহমেদ গত শতকের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। তার সৃষ্টিশীলতার জন্যই তিনি এই জনপ্রিয়তা পান। মৃত্যুর পরও পাঠকরা তার বই ক্রয় করছেন। তরুণ সমাজ ও নতুন পাঠকরা এখনও তার বইগুলো কিনছেন। তার বই বিক্রয় খুব বেশি কমেনি। পুরনো বইগুলো এখন বিভিন্ন বয়সের পাঠক সংগ্রহ করছেন। বাংলা সাহিত্যে এই লেখকের সৃষ্টি অনাদিকাল ধরে অক্ষয় থাকবে।

তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, হিমুর আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হিমুর বাবার কথামালা, আমি ও মিছির আলী, হিমু রিমান্ডে, মিছির আলীর চশমা, দিঘির জলে কার ছায়া গো, আজ হিমুর বিয়ে, লিলুয়া বাতাস, কিছু শৈশব, হুমায়ুন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস, আগুনের পরশমনি, পাপ ৭১, শ্রাবণ মেঘের দিন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে শংখনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া প্রভৃতি।

সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ুন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!