তোফায়েল আহছান ।।
২৯ জানুয়ারি ২০১৬। শুক্রবার। রাত ১১টা। সাধারণভাবে বন্ধের দিনগুলোতে ফেসবুকে সময় কম দেয়া হয়। এদিন রুটিন চেক করার সময় একটা এফবি মেসেজে ধাক্কা খেলাম। শিরোনাম ছিলো এমন ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আহলী পানিতে ডুবে মারা গেছেন’। পাঠিয়েছেন ছোটভাই আবদুল্লাহ আল মহসিন। সাথে সাথেই স্মৃতিতে ভেসে উঠলো অনেকগুলো দৃশ্যপট। এগুলো এতটাই জীবন্ত মনে হচ্ছিলো, যেন এখনই চোখের সামনে ঘটছে।
আলোচ্য নারী ”আহলী” চরিত্রটি একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর। তার বাড়ি নিকলী উপজেলা সদরের বড়পুকুর পাড়ে (অনেকের মতো আমিও তা-ই জানতাম; কিন্তু নিউজে জানলাম তার বাড়ি কটিয়াদির চাঁনপুরে)। সদরে বসবাসকারী প্রায় সবার মনেই কিছু না কিছু স্মৃতির অংশ জুড়ে আহলী রয়েছেন।
ছোটবেলায় দেখেছি, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আহলীর সরল চলাফেরা আর আচরণ আশপাশের দুষ্টু শিশুদের খেলার এক ধরনের উপকরণ হিসেবেই কাজ করতো। সবাই কম-বেশি জানতাম আহলী এক পাগলের নাম। কারো অস্বাভাবিক আচরণ দেখলেই বলা হতো, ‘আহলী হয়া গেলা নাকি?’ অনেকের উপলব্ধিটা এমন ছিল, যেন তার সাথে যেমন খুশি আচরণ করা যায়। তার কোনো রাগ-দুঃখ-অভিমান থাকতে নেই। কেন জানি মনে হতো, আহলীও ওই মুহূর্তটি উপভোগ করতো; যতক্ষণ না কেউ ঢিল ছুঁড়ে অথবা লাঠি দিয়ে আঘাত না করেছে।
রাস্তায় বের হলেই দেখা যেতো, আহলী হাঁটছে অথবা দৌড়াচ্ছে। পেছন পেছন ১০/১৫ জন শিশু ধাওয়া করছে। নানান ধরনের ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে তাকে উপহাস করা হচ্ছে। কেউ-বা ঢিল ছুড়ে মারছে। সামনে কোনো মুরুব্বি পড়লে, তিনি ধমকে দিলে কখনো এমন বিরক্তিকর আচরণ বন্ধ করতো শিশুরা। এত দীর্ঘ সময় ধরে শিশুদের ধাওয়া করে বেড়ানোর পরও আহলীর মুখে হাসিই ফুটে থাকতো। সব কিছু ছাপিয়ে একটা চেহারাই বার বার চোখে ভাসছে; হাসি-খুশি এক চরিত্রের নাম আহলী।
ক্ষমা করো আহলী। জেনে না-জেনে কত অন্যায় আচরণই-না করেছি। তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দরখাস্ত, হে আল্লাহ তুমি তাকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদান করো। তোমার ক্ষমার ছায়ায় তাকে আচ্ছাদিত করো। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিও।
সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে আবেদন, আমরা চেষ্টা করি কারো সাথে ভালো আচরণ না করতে পারলেও অন্তত মন্দ আচরণ করা থেকে বিরত থাকি। পরস্পর ভালোবাসার মাঝে বেঁচে থাকি। বাহ্যিকভাবে যারা সুস্থ-স্বাভাবিক শুধু তাদের সাথেই নয়; সব শ্রেণী-পেশা-মতের মানুষের সাথেই। এর উপযুক্ত সম্মান সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই প্রদান করবেন।