মহিবুর রহিম ।।
অশনি সঙ্কেতের সুর
প্রখর রোদের ঝাঁপি খোলে সূর্য যখন তাপ দেয়
গাঁয়ের মানুষ রুদ্ধশ্বাসে দীঘির জলে ঝাঁপ দেয়,
তেতে ওঠে মাঠের ফসল জমিন ফেটে চৌচির
শুকনো মুখে পাখ পাখালি একটুখানি চায় নীড়।
নিদাঘ রোদে হাপিয়ে ওঠে গাঁও গেরামের চারদিক
ঝাঁপিয়ে পড়া রোদের আলো মাঠে জ্বলে চিকচিক,
এই গরমে বাতাস উধাও বইছে ভীষণ নাভিশ্বাস
জীব-জন্তু পাখ-পাখালি করছে সবাই হাঁসফাস।
গ্রীষ্ম যেন উলঙ্গ এক ভূতের খেলায় মত্ত
তাপমাত্রার আগুন ঢেলে জ্বালাতে চায় স্বত্ব,
ডেকে আনে খরা কালের লু হাওয়াদের বংশ
যারা বহু জনপদকে করেছিল ধ্বংস।
প্রকৃতিতে উঞ্চতা যে বাড়ছে দেখি অহর্নিশ
এই সুযোগে সূর্যও তার ছড়িয়ে দেয় রোদের বিষ,
তাপমাত্রা বাজিয়ে চলে অশনি সঙ্কেতের সুর
তবু দেখি ভাঙে নারে বেকুব মানব জাতির ঘোর!
ঢাকা শহর
আরামবাগে গিয়েছিলাম আরাম সেথায় হারাম আজ
চারিদিকে প্রেসের ধ্বনি দিনে রাতে চলছে কাজ,
গুলিস্তানে গুলতানি যে সব হকারের আস্তানা
ধুমধাড়াক্কা ভিড়ের মাঝে কেনা-বেচায় খাস্তা না!
বঙ্গবাজার রঙ্গমেলা টঙে পসার ঝুলছে সব
সন্ধ্যাবধি লোকারণ্য তেজারতি তুলছে রব।
নবাবপুরের স্বভাব আজও হোলসেলে যায় মাল-সামান,
এসি করা ক্যাসিনোতে চলছে দারুণ দেশের গান!
সদরঘাটের বদরআলি কতরকম ব্যবসা তার
লাখের নিচে লাভ হলে যে বনি করা হয় না আর,
সবাই মিলে মতিঝিলে দেখায় নাকি টাকার খেল
সেই টাকারই অংশ নিতে ফরিয়ারা ঢালছে তেল।
এসব দেখে লাভ কি রে ভাই চলে যাব শান্তিবাগ
কিন্তু জ্যামে যাচ্ছি ঘেমে মনে ভীষণ উঠছে রাগ,
উড়ালসেতুর ঘুরালপথে বেহিসাবি ট্যাক্স চায়
পকেট ফাঁকা যাত্রীরা তাই পায়ে হাঁটার মওকা পায়।
যাত্রাবাড়ির মাত্রা ছাড়া রাস্তাগুলোর বেহাল ভাব
কত ঘটে দুর্ঘটনা কে রাখে আজ তার হিসাব?
শাহবাগের রাহাগুলো প্রতিদিনই টালমাটাল
লাগাম ছাড়া রাজনীতিতে চলছে কত গোপন চাল!
আদমপাচার
পাচারকারীর আচার খেয়ে
স্বপ্ন দেখে লাল মিয়া,
বাপের জমিন বিক্রি করে
বিদেশ যাবে ফাল দিয়া!
দালাল নাকি জালাল হাজি
লিবিয়াতে লোক পাঠায়
সেখান থেকে চোরাই পথে
ইতালিতে পাবেন ঠাঁই!
এমন লোভে লাল মিয়ারা
মরছে পথে বেশুমার,
মরুভূমির মরিচীকায়
করবে তাদের কে শুমার?
মরছে তারা সাগর জলে
ধুকছে অনেক জেলখানায়,
আদমপাচারকারী তখন
থাকছে অন্য ঠিকানায়।
করোনায় কুপোকাত-১
কাঁদে চীন মিন মিন
করোনার ধাক্কায়
ইতালিতে মরণের
হাওয়া যেন পাক খায়!
কাঁদে বসে সেই স্পেন
গলা ধরে ফ্রান্সের
স্ট্যান বাই ইংল্যান্ড
সমস্যা লান্সের।
আমেরিকা বড় সাব
সে কারণে বড় দাদ
অনুজীব করোনায়
আজ সবে কুপোকাত!
ভারতেরও দশ দশা
শোনা যায় খবরে
ভিড় নাকি বেড়ে গেছে
শ্মশানে ও কবরে!
দেশে দেশে উদ্বেগ
করোনার হামলায়
অতি লোভী মানুষেরা
পড়েছে যে মামলায়!
করোনায় কুপোকাত-২
পৃথিবীতে গুটি কয় মোড়লের ভূমিকায়
যুদ্ধ ও মন্দায় শুনি কত হায় হায়
ছুতানাতা পেলে তারা শুরু করে শোরগোল
তারপর যুদ্ধের দুঃসহ ডামাডোল।
প্রতিদিন ভয়াবহ অস্ত্রের মহরায়
অগুনতি মানুষের ঘরবাড়ি প্রাণ যায়
যুদ্ধের ফাঁদে ফেলে মানুষের সম্পদ
লুটে নেয় কৌশলে, এতটাই তারা বদ!
সব হারা মানুষেরা দেশ হতে দেশে যায়
সেখানেও বাধা তারা, বলে কোন ঠাঁই নাই!
এভাবেই অবিচারে কাঁদে গোটা বিশ্ব
বেহিসাবি মারা যায় কোটি কোটি নিঃস্ব।
রাজনীতি ব্যবসায়ে দেখি একই চিত্র
নিপীড়িত মানুষের নাই কোন মিত্র
প্রকৃতিকে পিষে তারা, দেখি সেই দম্ভ
বিবেকের তাড়নায় হই হতভম্ব।
মানুষেরা অসহায়, প্রকৃতিই নেয় দাদ
আজ এই মোড়লেরা করোনায় কুপোকাত!
নীতির কদর নেই বলে
অর্ধ পথে বৈঠা ভাঙার
বিপদ বড়ই শক্ত,
রাজনীতিতে ভুলের মাসুল
ঝরায় জাতির রক্ত!
নীতির কদর নেই বলেই
দুর্নীতি পায় শক্তি,
সুরের গলায় ছুরি দিয়ে
চলে অসুর ভক্তি!
শিষ্ট যারা গুম হয়ে যায়
দুষ্ট বসে তখতে,
গণতন্ত্র মূল্য হারায়
অশুভ সেই অক্তে!
গজিয়ে ওঠে দুর্নীতিবাজ
দেশ ভরে যায় মন্দে,
ঐক্য মিনার ভেঙে পড়ে
নানান মতের দ্বন্দ্বে।
রক্তে কেনা স্বাধীনতার
পাই না খুঁজে মূল্য,
প্রজাতন্ত্রে প্রজার জীবন
মরণ সমতুল্য!
লাগাম ছাড়া দামের ঘোড়া
১.
ব্যর্থ সকল হম্বিতম্বি
দ্রব্যমূল্য আকাশ চুম্বি
অতীত রেকর্ড ভাংছে রোজ
লাগাম টানার নাই যে খোঁজ!
পেয়াজ রসুন হুক্কাহুয়া
চলছে দারুণ দামের জুয়া,
মাছের দামে শরীর ঘামে
প্রেসার ওঠে প্রেসার নামে
সে ভাবনায় গোস্ত-চিকেন
ভদ্র জনে ইস্তফা দেন!
আদার কেজি দাদার মনে
অলক্ষুণে দিচ্ছে থ্রেট
দোহাই শুনি- বাড়ছে ভ্যাট
আসল কথা বলতে গেলে
মওকা মারে সিন্ডিকেট!
ক্রেতারা সব মনের শোকে
রাত দুপুরে কাঁপায় নেট!
লাগাম ছাড়া দামের ঘোড়া
করছে কেয়ার থোরা থোরা
কাহিনি কি বলব আর?
দেখছি হরেক কান্ড তার!
চাকরিজীবী লাকড়ি ছাড়া
খুব গোপনে হাওয়া রাঁধেন
আর না হলে থলে হাতে
বাজার পথে হঠাৎ কাঁদেন
গিন্নী এসে মায়ার বশে
পট্টি দিয়ে চক্ষু বাঁধেন!
২.
খবর কি ভাই খবর কি ভাই?
দ্রব্যমূল্যের নাগাল না পাই!
সে ভাবনায় ঘরের কোণায়
একটুখানি খুঁজছি যে ঠাঁই!
ঠাঁই খুঁজেও দিন চলে না
বাঁচার উপায় কেউ বলে না
ওভার টাইমে ফল ফলে না
চুলায় আগুন ঠিক জ্বলে না!
সতর্ক ছড়া
শর্ষেতে যে ভূত লুকিয়ে থাকে
খুব সহজে যায় না চেনা তাকে,
ঘরের ইঁদুর বেড়া কেটে পার পায়
সুযোগ পেলে বেড়ায় আবার ক্ষেত খায়!
যখন এমন লাগবে গন্ডগোল
লাভ হবে না ছিড়েও মাথার চুল।
ধর্ম নিয়ে ধূম্রজাল
ধর্ম নিয়ে ধূম্রজাল
চলছে দেখি অনেককাল
লাভের আশে লোভের বশে
কান্ড ছেড়ে ধরছে ডাল
ছদ্মবেশী নাস্তিকেরা
তিলকে দেখি বানায় তাল
সাধুর থলে ভরা কেন
অধর্ম আর বর্জ্য মাল?
তাইতো হাজার মন্দ এসে
মানব তরীর ভাংছে হাল!
স্রষ্টা যদি একজন হন
ধর্ম হবে একখানা
মানব জাতির পরিত্রাণে-
ধর্ম, সবার তাও জানা
সব রকমের বিভেদ করা
ধর্মে আছে তার মানা
এসব জেনেও আমরা কেন
চোখ থাকতে হই কানা?
অধর্ম আর ধর্ম কেন
এক পাল্লায় করছি টাল
আসল ফেলে খুঁজছি জাল
আনছি ডেকে করুন কাল!
সত্য ও ন্যায়
একটি ফুলে লাগলে ধুলো
থাকে কি তার শোভা?
অমাবশ্যায় আকাশে চাঁদ
হয় কী মনোলোভা?
তেমনি মানুষ নিজের গুণে
ফুলের মতোই থাকে,
মন্দ কাজের ধুলো এসে
তার শোভাকে ঢাকে।
সত্য ন্যায়ের ফুল-ফসলে
মানুষ গাছের সিদ্ধি,
সত্য ছাড়া এই জীবনের
ঘটে না সমৃদ্ধি।
মহত্তম ন্যায় কর্মের
পবিত্রার গন্ধে,
শোভন কোন ফুলের মত
জীবন হাসে ছন্দে।
যতই থাকুক ঘাত-প্রতিঘাত
সত্য ধরো আকড়ে,
মিথ্যা যতই হোক না প্রবল
তার মাঝে ঢের ফাঁক রে!
একটি সোনার পাখি
আমার ছিলো একটি সোনার পাখি
বহুযুগের ভালবাসায় করতো ডাকাডাকি
রোদের আলো মেঘের ছায়া আনতো বয়ে রোজ
সবুজ রঙিন স্বপ্নগলোর দিতো আমায় খোঁজ।
দিতো আমায় ভোর বিহানে নতুন জাগরণ
যার উছিলায় ফুলের শোভায় জাগতো আমার মন
যার উছিলায় ফিরে পেতাম হারানো সুখ-শান্তি
যার উড়ালের গতি আমার ঘুচিয়ে দিতো ভ্রান্তি।
নদীর বয়ে যাওয়ার মতো গায়তো গতির গান
ভোরের হাওয়ার মতো আমার জুড়িয়ে দিতো প্রাণ
আমার জন্যে আনতো বয়ে বরাভয়ের বাণী
সেই পাখিটা খুঁটে খেতো আমার যতো গ্লানি।
আমার বাগান ভরে তখন ফুটতো হাজার ফুল
আমার ঘরে স্বপ্ন-সাধের বইতো হুলোস্থূল
আমার মাঠের শস্যদানা ধাঁধিয়ে দিতো চোখ
আমার বাড়ির মানুষ পেতো স্বপ্নগড়ার সুখ।
সেই পাখিটা অচিনলোকের যাদুরকাটি দিয়ে
আমার যতো স্বপ্ন ও সাধ রাখতো যে আগলিয়ে
আমার যতো ব্যর্থতা আর আমার যতো ক্লান্তি
তার গানেতে দূর হয়ে সব আসতো নেমে শান্তি।
সইলো না সে সুখ বেশিদিন, দুষ্ট প্রতিবেশী
কঠিন আঘাত হানলো শেষে গোপনে বিদ্বেষী
অনেক ষড়যন্ত্রে আমার মরলো সোনার পাখি
শান্তি এবং সুখের সুরে উঠতো যে রোজ ডাকি।